Lead Newsকরোনাভাইরাসজাতীয়

করোনা রোগীর সংখ্যা রাজধানীতে এত বেশি কেন?

বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার একমাস পূর্ণ হয়েছে। গত ৮ মার্চ প্রথম এই ভাইরাসে দেশে সংক্রমণ হয়। এক মাসে দেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২১৮ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২০। আর সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৩৩ জন।

আক্রান্ত ২১৮ জনের মধ্যে শুধু ঢাকার রয়েছেন ১২৩ জন। বাকিরা দেশের বিভিন্ন জায়গার। এত পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ঢাকায় করোনা রোগী দিন দিন বাড়ছে কেন? বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ঢাকার কতগুলো জায়গা লকডাউন করা আছে, তার ভেতরেই হয়তো ছড়াচ্ছে। লকডাউন করে রাখা মানে লকডাউন এরিয়ার ভেতরে যারা আছে তারা হয়তো রাস্তায় বের হলো না। কিন্তু ভেতরে তো মেলামেশা করছে। ’

ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই-তিনটা বাসার আশপাশে যদি কেউ কোয়ারেন্টিনে থাকে, তার মধ্যে একজন যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে এরিয়া লকডাউন করলেও তারা তো ঘরের বাইরে যাচ্ছে, ভেতরে ছোট ছোট গলি আছে, সেই গলির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। এ কারণে ভেতরে তো ছড়াবার সম্ভাবনা আছে। ’

এভাবে চলতে থাকলে ঢাকায় করোনা রোগী আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে যে এলাকা লকডাউন করছে, এর ভেতরে কী হচ্ছে সেটা তো আমরা জানি না। আমরা দেখছি অনেক উদ্যোগ, অনেক কাজ হচ্ছে। কিন্তু ভেতরে সবাইকে যদি ঘরের মধ্যে না রাখতে পারি তাহলে হবে না।’

এমন পরিস্থিতিতে করণীয় কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘করণীয় হচ্ছে, যদি কোথাও একটা রোগী পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আইসোলেট করতে হবে। সেই রোগীর আশপাশের কয়েকটা বাসা একেবারে হোম কোয়ারেন্টিন করে রাখতে হবে। করে দেখতে হবে তাদের মধ্যে থেকে আর কয়জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। তারপর যেগুলো পাওয়া যাবে, সেগুলোকে আইসোলেট করতে হবে। ’

শুধু এলাকা লকডাউন করলেই হবে না, তার ভেতরে মানুষ সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকছে কি না, সে বিষয়টিও পূর্ণ নজরদারিতে রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন ডা. নজরুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘চীনে লকডাউনের পাশাপাশি কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। আমরা কিন্তু তা করছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় আজ যে ৩৯ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে, তার পাশের কয়েকটি বাসা সম্পূর্ণভাবে হোম কোয়ারেন্টিন করতে হবে। তাদের মধ্যে থেকে নতুন কেউ শনাক্ত হলেই তাকে আইসোলেট করতে হবে। ’

আইইডিসিআরের উদ্দেশে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ঢাকায় আজ নতুন করে যে ৩৯ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে, তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বা তাদের আশপাশের বাসিন্দাদের কীভাবে রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে তো কোনো কথা আমরা জানি না।’

করোনা মোকাবিলায় সরকারের ছুটি ঘোষণার পর প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। তাদের সঙ্গে আছেন ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ, যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। ফাঁকা রাজধানীর অন্তত ৫২ এলাকা এখন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও এই শহরের এত বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে কেন বা ঢাকার বাইরে করোনা রোগী কম কেন?

এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা একটা ছোট্ট জায়গা, আর সারা বাংলাদেশ। গতকাল ডিজি সাহেব বলেছেন, প্রত্যেক উপজেলা থেকে গোটা দশেক করে স্যাম্পল নেবে। তা কি নিয়েছে? খালি বলছে, কিন্তু করছে না তো। তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম, অন্য উপজেলাগুলোতে এগুলো আছে কি না। একটা উপজেলা থেকে হয়তো একটা স্যাম্পলও নেয়নি। তো সে উপজেলায় রোগী আছে কি না, সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না। ’

বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার একমাস হয়ে গেছে। এই সময়ে মোট সংক্রমিত রোগী ২১৮ জন। দেশে আক্রান্তের এই সংখ্যা নিয়ে মোটেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম, যদি সত্যিকারই সেটা সঠিক সংখ্যা হতো, তাহলে তো আমরা খুশিই হতাম। কিন্তু যদি টেস্টেড না হয় কোনো অঞ্চল, এর জন্য যদি (শনাক্ত) কম হয়, তাহলে এটা ঝুকিপূর্ণ।’ সূত্র: আমাদের সময়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 11 =

Back to top button