জাতীয়ভাইরাল

পাপিয়ার সঙ্গে ওয়েস্টিন হোটেল মালিকের ভিডিও ভাইরাল

গুলশানের ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। হোটেল কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে দীর্ঘদন এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে বলছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অথচ তারকা এই হোটেলে বোর্ডারদের প্রতিদিনকার তালিকা সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশেষ করে সুইমিংপুলে ডুলুডুলু চোখে ৬ নারীর জলকেলির ভাইরাল হওয়া ভিডিওর পর প্রশ্ন উঠেছে হোটেল ওয়েস্টিনে আসলে হচ্ছেটা কী? তবে এসব নিয়ে ওয়েস্টিনের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

পাপিয়া গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পাপিয়ার মোবাইল ফোন থেকে র‌্যাব সদস্যরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ ব্যক্তিদের আপত্তিকর ভিডিও উদ্ধার করেছেন। অনেকের সঙ্গে পাপিয়ার ছবি ও ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে।

এমন এক ভিডিওতে ওয়েস্টিনের মালিক নূর আলীকেও হোটেলের একটি স্যুইটে পাপিয়াসহ বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করতে দেখা গেছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, পাপিয়ার সঙ্গে রাজনীতি, নির্বাচনসহ নূর আলী নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলছেন।

হোটেলটির মালিকের সঙ্গে পাপিয়ার পাশের সোফায় হাসিমুখে বসে থাকতে দেখা যায় অল্পবয়সী বেশ কয়েকজন সুন্দরী ললনাকে। ইতোমধ্যেই ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার অবাধ বিচরণ, তার প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ব্যবহার ও তার সঙ্গে আড্ডার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এ বিষয়ে হোটেলটির মালিক নূর আলীর কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও গণমাধ্যমে আসেনি।

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সেখানে চলছিল নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর র‌্যাব-পুলিশের তদন্তের ঠিকানা হয়ে উঠেছে ওয়েস্টিন হোটেল।

দেশি-বিদেশি তরুণীদের এনে রুম ও স্যুইট ভাড়া করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জমজমাট বাণিজ্যতেও বাধা নেই হোটেলটিতে। নিয়ম-নীতিরও বালাই ছিল না সেখানে।

২২ ফেব্রুয়ারি আটকের পরই র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেছিলেন, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট’ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে আসছিলেন।

হোটেল কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসা কারও পক্ষেই সম্ভব নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।

গুলশানের ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটটি ভাড়া নিয়ে একজন রাজনৈতিক কর্মী মাসের পর মাস কী করছিলেন, তা ওই পাঁচতারা হোটেলের মালিক ও পরিচালনা কর্তৃপক্ষের শীর্ষ ব্যক্তিরা ভালোভাবেই জানতেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা সেদিন জানিয়েছিলেন।

ইতোমধ্যেই র‌্যাব পাঁচ তারকা ওই হোটেলটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রবেশদ্বারে স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।

পাপিয়া ও তার স্বামীসহ সহযোগীদের গ্রেফতারের পর র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘পাপিয়া হোটেলের ভেতরে তার কক্ষে এসব অপকর্ম করেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তার অবৈধ কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে কিনা বা তার কার্যক্রমকে বেগবান করতে অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি বলেন, যদি তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’

এদিকে যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া ও তার স্বামীসহ চারজনকে গ্রেফতারের মামলাটি তদন্তের জন্য রোববার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে গ্রেফতার ও রিমান্ডের পর থেকে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করছে র‌্যাব।

ইতোমধ্যেই র‌্যাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্তের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রথম থেকেই পাপিয়ার এসব অপকর্মের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে র‌্যাবের একটি টিম কাজ করছিল।

র‌্যাব সদস্যরাই স্বামী ও সহযোগীসহ পাপিয়াকে আটক করে আইনের কাছে সোপর্দ করেছে। তদন্তের দায়িত্বও র‌্যাব পাবে বলে ওই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন।

বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘সরাইখানা আইনে আছে, আবাসিক হোটেলে প্রতিদিন কারা অবস্থান করবে তাদের তালিকা নিকটস্থ থানায় জমা দিতে হবে। দেশি-বিদেশি যারাই থাক না কেন, তাদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা জমা দিতে হবে। তবে এত বেশিসংখ্যক আবাসিক হোটেল যে প্রতিনিয়ত সেটি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

প্রতিনিয়ত করলে হোটেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয় এবং পুলিশেরও তদারকিতে অসুবিধা হয়। তাই খুব বেশি তদারকি করা হয় না বলে তিনি স্বীকার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোটেলটির দিনের চিত্র এক রকম। সন্ধ্যা হতেই বদলে যায় এর ভেতরকার দৃশ্যপট। পাঁচতলায় সুইমিংপুল ও বারের পাশে অনুমোদনহীন সিসা বারে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে আড্ডা।

তবে পাপিয়াকাণ্ডের পর সেখানে চলছে রাখঢাক। সিসা বার বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত আসতেন ধনাঢ্য পরিবারের এমন সন্তানদের আনাগোনা কমে গেছে বলে জানা গেছে।

ভবন নির্দেশিকা মতে, টপফ্লোরে রেস্টুরেন্ট, বার ও বেলকুনিতে কফি শপ। নিচতলায় স্ন্যাকস বার-মদের বার। দোতলায় একই ব্যবস্থা। পাঁচতলায় স্পা, মেসেজ পার্লার ও সুইমিংপুল।

২১ ও ২২ তলায় প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট। সেখানকার একটি স্যুটে গত বছরের ১২ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২০ দিন ছিলেন পাপিয়া। এ ছাড়া গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই হোটেলে অবস্থান করছিলেন তিনি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে আটকের সময়ও তার নামে ওই স্যুইটটি বুকিং ছিল। সূত্র যুগান্তর।

 

আরও খবর পেতেঃ বিচিত্র নিউজভাইরাল নিউজ 

Bangla News24, Bangla News24, Bangla News24

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 4 =

Back to top button