Lead Newsশিল্প ও বাণিজ্য

অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাত নির্দেশনা

দেশে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এখন ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ জোরেশোরে চলছে। এর মধ্যে ১৩টি অঞ্চল সরকারি খাতে এবং ১৫টি অঞ্চল বেসরকারি খাতে। চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেশকিছু ইউনিট উৎপাদন শুরু করে দেশের রফতানি আয়ে সুবাতাসও দিচ্ছে।

এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা ওই বৈঠকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সাতটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছ।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো হচ্ছে

১. অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়া যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প স্থাপন নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্যান্য পরিষেবা প্রদান প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। শিল্প উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনসহ বিনিয়োগের পরামর্শ দিতে হবে। এ বিষয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে এবং সবাইকে অবহিত করতে হবে।

২. শিল্পের জন্য বরাদ্দ জমি ফেলে রাখা যাবে না, অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেসব বিনিয়োগকারী জমি বরাদ্দ নিয়েছেন তা ঠিক মতো শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে কি-না তা তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিসহ একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

৩. দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় কৃষি জমি সংরক্ষণ করতে হবে।

৪. বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে কি-না তা দেখার জন্য বেজা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সরকারের রাজস্ব আহরণে কোনো নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বেসরকারি খাতে যেসব স্থানে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে সেসব স্থানে পূর্বে প্রতিষ্ঠিত শিল্প কল-কারখানা আগের মতো কর পরিশোধ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর সুবিধা কার্যকর হবে না।

৫. কক্সবাজার জেলাধীন মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়ায় শুধু ইকো-ট্যুরিজম পার্কভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সোনাদিয়া দ্বীপ ও দ্বীপ সংলগ্ন লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। এখানে মাছের ঘের কিংবা কোনো শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে না।

৬. সোনাদিয়া দ্বীপে বেজা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বনায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

৭. সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়নের ফলে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বন্যা ও সাইক্লোন বিবেচনায় নিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। পাশাপাশি সুরক্ষিত থাকবে পরিবেশ ও প্রতিবেশ।

এদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রতিবেদন বলছে, বিনিয়োগে সুখবর দিচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। বেজার সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, তিনটি সরকারি ও ১০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট এক হাজার ৭৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি।

বিনিয়োগকারীরা সরকারি তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭৭টি কোম্পানি–নির্ধারিত ইজারামূল্যে জমি নিয়ে কেউ কারখানার কাজ শুরু করেছে, কেউ জমি হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। সে তুলনায় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এগিয়ে। সেখানে ৩৯টি কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য জমি নিয়ে ২০টি ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে পণ্য বিদেশে রফতানিও শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ১০ কোটি ডলার।

সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিনিয়োগকারীদের জমির সমস্যা কমিয়ে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবা সংযোগ এবং অবকাঠামোর নিশ্চয়তা পাচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এখন যে বিনিয়োগ আসছে, সেগুলো শুধু প্রস্তাব নয় বরং বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অর্থ দিয়ে জমি নিচ্ছে। এর বাইরেও প্রচুর প্রস্তাব আছে।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জমি পাওয়ার দুর্ভোগ আর থাকবে না। বেজার হাতে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার একরের মতো জমি এসেছে। আরও আসার অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের এখন সহায়তা ও নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বিনিয়োগকারীদের কারখানা করার বিষয়টি নির্বিঘ্ন করতে হবে, সুত্র জাগো নিউজ।

 

আরও খবর পেতেঃ প্রবাস ও  বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা 

Tag: Bangladesh all newspapers,  All newspapers Bangladesh

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 2 =

Back to top button