আন্তর্জাতিক

‘এসব নারীর কারনেই ধর্ষণ বন্ধ হয় না’

চার ধর্ষককে মাফ করে দেয়ার আবেদন করায় প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহের কড়া সমালোচনা করেছেন নির্ভয়ার মা আশা দেবী। তিনি জয়সিংহের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, এদের কারণেই ধর্ষণ বন্ধ হয় না। ধর্ষিতারা যথাযথ বিচার পান না।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) প্রবীণ ওই আইনজীবী নির্ভয়ার মায়ের উদ্দেশে ধর্ষক-খুনিদের মাফ করে দেয়ার আহ্বান জানালে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) আশা দেবী এ কথা বলেন।

২০১২ সালে দিল্লির চলন্ত বাসে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে চার জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় সে আদেশ কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকারী নলিনীকে সম্প্রতি ক্ষমা করে দেন তার পত্নী ও কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। সে বিষয়টি টেনে জয়সিংহ চার ধর্ষককে ক্ষমা করে দেয়ার আবেদন করেন আশা দেবীর কাছে।

নির্ভয়ার মাকে উদ্দেশ্য করে জয়সিংহ বলেন, ‘আপনার কষ্ট আমরা বুঝতে পারি। আপনার সঙ্গেই রয়েছি। তবে সোনিয়া গান্ধী যেমন রাজীব গান্ধীর আততায়ী নলিনীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তার মতো নির্ভয়ার মায়েরও উচিত ধর্ষকদের ক্ষমা করে দেয়া।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে আশা দেবী বলেন, ‘ইন্দিরা জয়সিংহ কে? তিনি আমাকে পরামর্শ দেয়ার কে? গোটা দেশ যখন ধর্ষকদের ফাঁসি চাইছে, তখন তার (ইন্দিরা জয়সিংহ) মতো কয়েকজন এ ধরনের কথা বলেন, তাদের জন্যই ধর্ষিতারা এ দেশে যথাযথ বিচার পান না।’

নির্ভয়ার মা জানান, টানা সাত বছর ধরে মামলা চলার সময় সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে তার। কিন্তু কীভাবে তিনি দিন কাটাচ্ছেন, তা আশা দেবীর কাছে একবারও জানতে চাননি জয়সিংহ।

আশা দেবী বলেন, ধর্ষকদের পক্ষ নিয়েই তাদের (ইন্দিরা জয়সিংহ) রোজগার হয়। তাই ধর্ষণের ঘটনা ভারতে বন্ধ হয় না।

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে ফিরছিলেন প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী নির্ভয়া। যাত্রী কম থাকায় বাসের চালক-সহকারীসহ অন্তত ছয়জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রাখে। এরপর ওই ছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে দুজনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।

আহতাবস্থায় দেশটির সরকার মেডিক্যালের এই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায়। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকে।

নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের আসামিদের ধরার পর প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। ২০১৩ সালে দ্রুত বিচার আদালত চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করে। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখে। এই চার আসামির মধ্যে একজন মুকেশ সিং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েও পাননি।

অন্যদিকে দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এই তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়, সূত্র জাগো নিউজ

 

আরও খবর পেতেঃ প্রবাসধর্ষণের শাস্তি কোন দেশে কেমন?

Tag: Breaking news 24/7, Breaking news 24/7 update

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four − 2 =

Back to top button