Lead Newsকরোনাভাইরাস

তাহলে করোনাভাইরাসের উৎস চীনে পাচার হওয়া প্যাঙ্গোলিন?

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণী প্যাঙ্গোলিন ব্যাপক হারে চীনে পাচার হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী এটি। প্যাঙ্গোলিনের দেহে এমন এক ভাইরাস পাওয়া গেছে যা কোভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত’। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ প্রাণীটিকে খাদ্য ছাড়াও চীনে ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেশটিতে প্যাঙ্গোলিনের গায়ের আঁশ দিয়ে এ সব ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও প্রাণীটির মাংসও একটি উপাদেয় খাবার বলে গণ্য করা হয়।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বলেছেন, চীনে পাচার হওয়া মালয়ান প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে এমন দুই ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া মহামারীর সঙ্গে সম্পর্কিত।

নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ সব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে হলে বুনো প্রাণীর বাজারে প্যাঙ্গোলিনের মতো জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।

তারা আরও বলছেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের ভূমিকা বুঝতে হলে আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন।

ড. ল্যাম বলেন, ‘যদিও সার্স-কোভ-টু-র প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে প্যাঙ্গোলিনের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে, তবে ভবিষ্যতে যদি এরকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারী ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে বাজারে এ সব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত’।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাঁদুড়ের দেহেও করোনাভাইরাস আছে, এবং তার সঙ্গে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের আরও বেশি মিল আছে। কিন্তু একটি অংশ- যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে- তার সঙ্গে এর মিল নেই।

সহ-গবেষক সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হল বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে যা মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। তিনি বলছেন,‘করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাঁদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো প্যাঙ্গোলিনও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোনো প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।’

ডা. ল্যাম বলছেন, চোরাই পথে আসা মালয়ান প্যাঙ্গোলিনে এ ভাইরাস পাওয়া যাওবার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে- এই প্যাঙ্গোলিনের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকল কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাঁদুড় থেকে এসেছিল- নাকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেখানেই ঘটেছিল?

প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার রোধের জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা।

ইতিমধ্যে চীন কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া ভিয়েতনামেও এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে এক লাফে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। তার বক্তব্য, কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস আসলে এখনও অজানা। হয়তো এটা কোনো প্রাকৃতিক প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসেই ছিল বা হয়তো প্যাঙ্গোলিন ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোনো প্রাণী থেকে এসেছিল। সূত্র বিবিসি বাংলা ।

 

আরও খবর পেতে দেখুনঃ  করোনাভাইরাস অবস্থা প্রবাস নিউজ 

Coronavirus China, Coronavirus China

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + three =

Back to top button