সিলেটে হোম কোয়ারেন্টিনে একজনের মৃত্যু
সিলেটে হোম কোয়রেন্টাইনে থাকা এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৯টায় নিজ বাসায় মারা যান তিনি। নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি (৬৫) দেশে থাকলেও তার ছেলে এক সাপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হতো তাকে। গত ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে তার ছেলে দেশে ফেরেন। পরদিন ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বাবাকে নিয়ে সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনে যান প্রবাসী ছেলে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিস্তারিত শুনে তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার পরামর্শ দেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, খবর দেয়ার পর সিসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এসেও তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলেছিলেন। তবে বাড়িতেই মঙ্গলবার রাত ৯টায় তিনি মারা যান। তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত ছিলেন কি না তা নিশ্চিতের জন্য কোনো পরীক্ষা করানো হয়নি।
বাসায় থেকেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পারিবারিক সূত্র জানায়- গত ১৪ই মার্চ বৃটেন থেকে বাড়ি আসেন তার ছেলে ও ছেলের বউ। বাড়ি আসার পরদিনই তার ছেলে বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে কিডনি রোগের ডায়ালাইসিস দিতে কিডনি ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান। এ সময় ডাক্তাররা লন্ডন ফেরত ছেলের সঙ্গে পিতাকে দেখে হতবাক হন।
হোম কোয়ারেন্টিনে না থাকার কারণে বৃদ্ধ পিতাকে ডায়ালাইসিস না করেই তারা ফিরিয়ে দেন। এবং জানান, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ডাক্তারদের এমন কথা শুনে গিয়াস উদ্দিনকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। খবরটি শুনেন স্থানীয় কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদি। তিনি তাৎক্ষণিক বিষয়টি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবগত করেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনের বাসায় যান।
এবং ওই বৃদ্ধকে সরকারিভাবে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু গিয়াস উদ্দিনের পরিবার তাকে ভর্তি করেননি। এই অবস্থায় লন্ডন ফেরত সন্তান বেসরকারিভাবে তাকে চিকিৎসা এবং ডায়ালাইসিস করাতে ব্যর্থ হন।
অবশেষে পিতাকে অসুস্থ রেখেই গত ২১শে মার্চ বৃটেনে চলে যান ছেলে এবং ছেলের বউ। পারিবারিকভাবে সতর্কতার অংশ হিসেবে গিয়াসউদ্দিনকে বাসাতেই কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এই অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বাসাতেই মারা যান গিয়াস উদ্দিন।
তার মৃত্যুর খবর শুনে বিষয়টি নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করেন কাউন্সিলর কয়েস লোদী। এ সময় জেলা প্রশাসক লাশ দ্রুত দাফনের পরামর্শ দেন। বিষয়টি নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিতে বেকায়দায় পড়েন কাউন্সিলর।
পরে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে গতকাল ওই বৃদ্ধের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- গিয়াস উদ্দিন আক্রান্ত ছিলেন কিনা কেউ জানেন। ফলে তার দাফন নিয়ে সবাই বিব্রত ছিলেন। পরে গতকাল বাদ জোহর দাফন করা হয়েছে।
এদিকে- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- ওই রোগী পরপর তিন দফা কিডনি ডায়ালসিস করাতে পারেননি। এ কারণে আমরা ধারণা করছি- কিডনির জটিলতার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া তাকে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
কিন্তু তিনি আসেননি। ভাতিজা ওমর মাহবুবের স্ট্যাটাস: চাচা গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর পর ঘটনাটি জানিয়ে ভাতিজা ওমর মাহবুব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। এতে তিনি উল্লেখ করেন- ‘আমার চাচা দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি ও নানাবিদ রোগে আক্রান্ত। তিনি নিয়মিত সিলেট কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস দিয়ে আসছেন।
২৩শে মার্চ উনার ডায়ালাইসিস দেয়ার তারিখ ছিল। উনার চার ছেলে, চারজনই বৃটেনে থাকেন। একজন ছেলে এসেছিলেন বাবাকে দেখার জন্য। দুর্ভাগ্যক্রমে বাবার প্রতি ভালোবাসায় ডায়ালাইসিস দেয়ার জন্য উনি নিজেই বাবাকে কিডনি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ডায়ালাইসিস দিতে বিলম্ব হলে শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়।
ছেলে বৃটেন ফেরত আর বাবার শ্বাসকষ্ট দেখে ডাক্তাররা ডিক্লেয়ার করে দিলেন উনার করোনা ভাইরাস ও সব হাসপাতালে মেসেজ দিয়ে দিলেন উনাকে ডায়ালাইসিস না দেয়ার জন্য।
উনি দীর্ঘ ৫ দিন অসহায়ের মতো বিনা চিকিৎসায় ছটফট করে গতকাল রাত ৯টায় মৃত্যুবরণ করেন। উনার যদি করোনা ভাইরাস থাকতো তাহলে উনার স্ত্রী ৬০ বছর ও উনার শাশুড়ির ৮৫ বছর বয়স্ক উনার পাশে ছিলেন তাহলে তারাও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হতেন।
আরও খবর পেতে দেখুনঃ করোনাভাইরাস সর্বশেষ খবর – কর্পোরেট সংবাদ
Coronavirus Update, Coronavirus Update, Coronavirus Update