আর কত লাশ দেখলে শান্ত হবে কোভিড-১৯?
পৃথিবী বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব জায়গা মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে, সেগুলো দেখলে এখন ভূতুড়ে মনে হয়। প্রতিদিনের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা, স্কুল বন্ধ, ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা, গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ – এসব কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একটি রোগে ঠেকানোর ক্ষেত্রে পুরো বিশ্ব যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটি নজিরবিহীন। কিন্তু এর শেষ কোথায়? মানুষ কবে নাগাদ তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে ফিরতে পারবে?
এটা পরিষ্কার যে যেভাবে বড় বড় শহর বন্ধ রাখা হচ্ছে এবং মানুষের দৈনন্দিন চলাফেরারা উপর বিধি আরোপ করা হচ্ছে, সেটি দীর্ঘমেয়াদি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এভাবে সবকিছু বন্ধ থাকলে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব হবে মারাত্মক।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশগুলোকে একটি কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। বিধিনিষেধগুলো প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার উপায় খুঁজতে হবে।
একথা ঠিক যে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। এসব বিধিনিষেধ তুলে দিলে সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে।
“এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কৌশল কী হবে এবং সেখান থেকে আমরা কিভাবে বের হয়ে আসবো -এনিয়ে নিয়ে বড় সমস্যা আছে,” বলছিলেন এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীর কোন দেশেরই কৌশল নেই। এই কৌশল ঠিক করা বড় ধরণের বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ।
এর তিনটি উপায় আছে।
১. টিকা দেয়া।
২. বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের ফলে তাদের মধ্যে এনিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।
৩. অথবা স্থায়ীভাবে মানুষ এবং সমাজের আচার-আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসা।
টিকা আসতে সময় লাগবে ১২ থেকে ১৮ মাস। এই টিকা গ্রহণ করলে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসলেও তারা অসুস্থ হবে না। যত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া যাবে ততই ভালো। যদি মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে টিকা দেয়া হয়, তাহলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে না।
ইতোমধ্যে আমেরিকায় এক ব্যক্তির দেহে পরীক্ষামূলক-ভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে। যে কোন টিকা আবিষ্কার করলে সেটি প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার করা হয় যে কোন প্রাণির উপর। এক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে প্রথমেই মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের জন্য বেশ দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। কিন্তু এটি সফল হবে কিনা কিংবা বিশ্বজুড়ে এই টিকা দেয়া যাবে কি না – সে নিশ্চয়তা নেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য জন্য ব্রিটেন যে কৌশল নিয়েছে সেটি হচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা যাতে হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ না হয়ে যায়। হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে আইসিইউতে জায়গা পাওয়া যাবে না। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্সি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কখন কোন পর্যায়ে যাবে সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া সম্ভব নয়।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেন, “আমরা সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে রাখার কথা বলছি যাতে করে দেশের একটি কম সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়।”
” আমরা যদি দুই বছরের বেশি সময় যাবত এটা করতে পারি তাহলে দেশের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে। এর ফলে স্বাভাবিক নিয়মে রোগ প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।”
কিন্তু এ কৌশলের মাধ্যমে গড়ে ওঠা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতদিন টিকবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অতীতে করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরণের যেসব সংক্রমণ হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুব ভালো কাজ করেনি। অনেকে মানুষ তাদের জীবনে বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হয়েছে। সূত্র বিবিসি।
আরও খবর পেতে দেখুনঃ করোনাভাইরাস নিউজ – ক্যারিয়ার নিউজ
Coronavirus Wikipedia, Coronavirus Wikipedia