আন্তর্জাতিক

অভিশংসিত হলেন ট্রাম্প, এখন কী হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হয়েছেন । মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে দুটি অভিযোগে অভিশংসন হয়েছে ট্রাম্পের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে পরবর্তী ধাপগুলো সম্পর্কে।

অভিশংসন ব্যবস্থাপক বাছাই

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ডেমোক্র্যাট দলের ন্যান্সি পেলোসিকে এখন একটি ‘ইমপিচমেন্ট ম্যানেজারস’ বা ‘অভিশংসন ব্যবস্থাপকবৃন্দের’ দল গঠন করতে হবে। এই দলটি ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে অপসারণ করতে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বিষয়টি উত্থাপন করবে। আগামী মাসে, অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন-পরবর্তী বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। ‘ইমপিচমেন্ট ম্যানেজারস’ দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটির প্রধান অ্যাডাম শিফ ও জুডিশিয়ারি কমিটির প্রধান জেরি ন্যাডলার। এ ছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় রিপাবলিকান দল ছেড়ে মিশিগান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করা জাস্টিন অ্যাম্যাশ ‘ইমপিচমেন্ট ম্যানেজারস’ দলে জায়গা পেতে পারেন বলে অনেকে মনে করছে। জাস্টিন অ্যাম্যাশ যদি সত্যিই অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে সেটি সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের বিচার প্রার্থনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলবে।

সিনেটে অভিশংসনসংক্রান্ত বিচার স্থানান্তর

ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপটি খুব শিগগির প্রতিনিধি পরিষদ থেকে সিনেটে স্থানান্তর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের সমালোচকদের একাংশ এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করার পক্ষে। তাঁরা এখনই পেলোসিকে মামলাটি সিনেটে না পাঠাতে আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান দলীয় নেতা মিচ ম্যাকোনেল পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, মামলাটি সিনেটে এলে কোনো সাক্ষী হাজির করার আগেই তা খারিজ দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য। তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের তোড়জোড় দেখে মনে হচ্ছে সিনেটে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হবে না।

সিনেটে বিচার ট্রাম্প অপসারিত না হওয়ার সম্ভাব্যতা

ম্যাকোনেল জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা ও হোয়াইট হাউস থেকে অপসারণে জানুয়ারি মাসেই মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী সিনেটে বিচার প্রক্রিয়ার আয়োজন করা হবে। তবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হতে পারেননি ম্যাকোনেল ও সিনেটের সংখ্যালঘিষ্ঠ নেতা চাক শুমার। বিচারে কোন সাক্ষীদের ডাকা হবে কিংবা কোন প্রমাণগুলো গ্রহণ করা হবে, এমন কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতদ্বৈধতা রয়েছে। এমনিতে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকলেও এ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোও জরুরি। বিচার প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। বিচার প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত কোনো জটিলতায় তিনি চাইলে রুল জারি করতে পারেন। তবে এতে তাঁর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে অপসারিত করতে হলে দু-তৃতীয়াংশ সিনেটরের সমর্থন ভোট প্রয়োজন হবে। কিন্তু সেটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে বর্তমানে ট্রাম্পের বিরোধীরা সংখ্যাগুরু। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে কংগ্রেসের ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ সিনেটের দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট প্রয়োজন হয়।

বর্তমান সিনেটে ৫৩ জন রিপাবলিকান, ৪৫ ডেমোক্র্যাটস ও দুজন স্বতন্ত্র সিনেটর রয়েছেন। স্বতন্ত্র দুই সিনেটর ডেমোক্র্যাট-ঘেঁষা। ট্রাম্পকে গদিছাড়া করতে সব ডেমোক্র্যাট সিনেটর ও দুই স্বতন্ত্র সিনেটরসহ অন্তত ২০ জন রিপাবলিকান সিনেটরের ভোট প্রয়োজন পড়বে।

এদিকে রিপাবলিকান দলের একাধিক প্রভাবশালী জ্যেষ্ঠ নেতা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ট্রাম্পকে অভিযোগ থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।

অভিশংসিত যত মার্কিন প্রেসিডেন্ট

সর্বশেষ যে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তিনি বিল ক্লিনটন। ১৯৯৮ সালে ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটি হয়েছিল।

এর আগে ১৮৬৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ক্লিনটন কিংবা জনসন, কেউই সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হননি।

সুতরাং, অভিশংসনের অর্থ এই নয় যে এর প্রক্রিয়া শুরু হলেই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে উল্লেখিত বিধান অনুযায়ী সিনেটের দু-তৃতীয়াংশ সিনেটরের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে ক্ষমতা হারাননি। এ পর্যন্ত দুজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন। ১৮৬৮ সালে অ্যান্ড্রু জনসন ও ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটন অভিশংসিত হন। সিনেটে এক ভোটের জন্য মেলেনি অ্যান্ড্রু জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রয়োজনীয় দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছাড়েন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।

আরও সংবাদঃ জাতীয়ট্রাম্পের ৯ বিতর্কিত মন্তব্য

ট্যাগঃ Donald Trump News, News on  Donald Trump

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + 19 =

Back to top button