ধর্ম ও জীবন

কুরবানি করার আগে যে বিষয়টি জানা জরুরি

আমল করার পূর্বশর্ত হলো ইলম শেখা। কোনো কিছু শেখা ছাড়া সঠিকভাবে আমল করা যায় না। তা করলেও সঠিক ও সুন্দর হয় না। এ কারণেই যে কোনো আমল করার আগেই ইলম শিখতে হয়। কুরবানিও এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা পালন করার আগে একটি বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

কুরবানির আমলটি করার আগে সে সম্পর্কে বেশকিছু জিনিস শেখার আছে, যা অনেকেরই জানা নেই। বিশেষ করে কুরবানি কী কারণে করতে হয় তা অনেকেই জানে না। পর্যায়ক্রমে এসব বিষয় তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে প্রথমেই যে বিষয়টি জানা জরুরি, তাহলো-
কুরবানি কী? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ কী বলেছেন?

কুরবানি হচ্ছে মনের তাকওয়া। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কুরবানির পশু জবাই করা। কুরবানির মধ্যে যদি অন্য কোনো চিন্তা থাকে তবে সে কুরবানি আদায় হবে না। কুরবানি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

এ জন্য কুরবানি করার আগে থামা এবং চিন্তা করা উচিত। কী জন্য এ কুরবানি? কেন কুরবানি করে মুমিন মুসলমান? কুরবানি করার সময় মুমিন মুসলমানের অবস্থা কেমন থাকবে? কুরবানির গোশত, রক্ত কি আল্লাহর কাছে পৌছে?

হ্যাঁ, কুরবানি হচ্ছে মানুষের মনে তাকওয়া। আল্লাহর হুকুম পালনে শুধু আল্লাহর জন্য কুরবানি করা। কুরবানি করার সময় প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে এ নিয়ত রাখা যে, কুরবানি শুধু আল্লাহর জন্য। মানুষের হৃদয়ে এ আবেগ ও অবস্থা বিরাজ করা জরুরি যে, মুমিন বান্দা বলবে-
‘হে আল্লাহ! তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করছি। তুমি আমাদের কুরবানি কবুল করে নাও।’ কেননা এ কুরবানির পশুর কোনো অংশই তোমার কাছে পৌঁছায় না, পৌঁছে শুধু আমাদের হৃদয়ের খালেছ নিয়ত। কুরবানি করার আগে এভাবে নিজের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা জরুরি।

যদি নিয়ত এমন না হয় তবে আদৌ কুরবানি কবুল হবে না। করবানির হক আদায় হবে না। শুধু লোক দেখানো, আর গোস্ত খাওয়া ছাড়া কুরবানির কোনো ফায়েদাই পাবে না মানুষ।

কেননা এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যারা এ কুরবানিকে লোক দেখানোর প্রতিযোগিতা স্বরূপ আদায় করে থাকে। এ যেন এক ফ্যাশন। কে কত বড় পশু কুরবানি করতে পারলো? কার পশুর দাম কত বেশি? কে দেশ সেরা পশু কুরবানি করলো? ইত্যাদি ইত্যাদি…

আলহামদুলিল্লাহ! বর্তমান সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলেম-ওলামা ও ইসলামিক স্কলারদের আলোচনা ও দাওয়াতের কারণে, কুরবানি সম্পর্কে আলোচনার কারণে অনেক মানুষই কুরবানি সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সঠিক ধারণা পেয়েছে। আর সেভাবেই কুরবানি পালনের চেষ্টা করছে।

এর মাঝেও অনেক সময় বেখেয়ালে, অনেক সময় কথার ছলে এসব বিষয়গুলো এসে যায়, যা তার কুরবানিকে নষ্ট করে দেয়। যার ফলে এ কুরবানি আর ইবাদত থাকে না। নিয়তের কারণে তখন আর কুরবানি ইবাদত থাকে না। কারণ ইবাদত হয় সেই কাজ, যে কাজ বান্দা মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকেন।

ব্যাপকভাবে কুরবানি করার কিছু কারণ
কুরবানি এমন এক ইবাদত। যে ইবাদতে সব মানুষ অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করে। সমাজের একাংশের মানুষের কুরবানি করার অন্যতম কারণগুলো হলো-
– কুরবানির নগদ লাভ পাওয়া। কুরবানি করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নগদ লাভ হিসেবে গোশত পেয়ে থাকে। যা অন্য কোনো ইবাদতে পাওয়া যায় না। এ রমক নিয়ত থাকলেও কুরবানি হবে না।
– এক শ্রেণির মানুষ নেতৃত্বের খাতিরে কুরবানি করে থাকে। নিজেকে নেতা হিসেবে প্রতষ্ঠিা করতে কুরবানি করে থাকে। এমন চিন্তা থাকলেও কুরবানি হবে না।
– নাম যশের জন্য অনেকে কুরবানি করে। একাধিক সংখ্যক বড় পশু কুরবানি করে অন্যদের দৃষ্টি আকষণ করে থাকে। এ নিয়তে কুরবানি করলেও তা আদায় হবে না।

এ সবই কুরবানির নিন্দনীয় কাজ। এ কাজ ও নিয়তের ফলে মানুষের কুরবানি কবুল হয় না। সে কারণেই কুরবানি কী? আর কেন কুরবানি করতে হয়। কুরবানি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ কী নসিহত করেছেন, তা বুঝতে হবে। চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। তারপর কুরবানির সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বেশি বেশি এ আয়াতটি স্মরণ করতে হবে-
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
‘এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ আয়াতের আলোকে কুরবানির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার তাওফিক দান করুন। পশু কুরবানিকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম বানিয়ে দিন। আমিন।

আরও খবর পেতে দেখুনঃ ইতিহাসের ডায়েরীখোলা জানালা

Eid Ul Adha Qurbani Rules, Eid Ul Adha Qurbani Rules

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + 11 =

Back to top button