ধর্ম ও জীবন

নামের শেষে ‘রাহিমাহুল্লাহ-হাফিজাহুল্লাহ’ কেন ব্যবহার হয়?

আমরা প্রায় সময় নামের শেষে রাদিয়াল্লাহু (রা.), রাহমাতুল্লাহ (রাহ.), হাফিজাহুল্লাহ (হা.), দামাত বারাকাতুহুম (দা.বা.), মাদ্দা জিল্লুহুল আলিয়া (মা.জি.আ.) ইত্যাদি শব্দ বলি বা লিখি। আপনি কি জানেন এ শব্দগুলো কেন ব্যবহার করা হয়? জীবিত বা মৃত মানুষের ক্ষেত্রে এ শব্দগুলো ব্যবহার করা যাবে?

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নামের শেষে ব্যবহার করা এ শব্দগুলো মূলত দোয়া। যেমন- ‘রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’ অর্থ হলো- তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। ’রাহিমাহুল্লাহ’ অর্থ হলো- আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন। ‘হাফিজাহুল্লাহ’ অর্থ হলো- আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাজত করুন। ‘দামাত বারাকাতুহুম’ অর্থ হলো- তার হায়াতে বরকত দান করুন। মূলত এ শব্দগুলো দোয়া বাক্য।

তাই যে কোনো মুসলিম মারা গেলে যেমন- রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বা রাহিমাহুল্লাহ বলা হয়। তেমনি জীবিত মুসলমদের জন্য হাফিজাহুল্লাহ, দামাত বারাকাতুহুম ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। আর এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য দোয়া করবে, তা ইসলামি শরিয়ত সম্মতও বটে।

মনে রাখতে হবে
আমরা অনেকেই কমে করি যে দোয়ার এ বিষয়গুলো শুধু আলেম-ওলামা বা দ্বীনদার-বুজুর্গ ব্যক্তিদের জন্যই নির্ধারিত; ধারনাটি একেবারেই ভুল। বরং এই দোয়া-বাক্যগুলো সব মুসলীমদের জন্যই ব্যবহার করা যাবে।

কারণ জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের জন্য রহমত (দয়া), মাগফেরাত (ক্ষমা), কবরের আজাব থেকে মুক্তি, কবরের শান্তি, জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত এবং জান্নাতে পাওয়ার জন্য দোয়া করবে। কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে রাসূল সাঃ অনেক দোয়া শিখিয়েছেন।

যাতে মৃত মুমিন মুসলমান এ দোয়ার দ্বারা উপকৃত হয়। কেননা সব মুমিন মুসলমানই মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার মুখাপেক্ষী।

সুতরাং আলেম-ওলামা, সাধারণ দ্বীনদার, এমনকি গোনাহগার মুসলিমদের জন্যও সংক্ষেপে রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (আল্লাহ তাআলা তার উপর রহমত দান করুন), রহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন) কিংবা হাফিজাহুল্লাহ (আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন), দামাত বারাকাতুহুম (আল্লাহ তাকে উত্তম হায়াত দান করুন) মর্মে দোয়া করা জায়েজ।

যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
তবে কোনো ব্যক্তি যদি বড় বা মারাত্মক কোনো গোনাহ করে বসে, যা তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়; যেমন- আল্লাহ, রাসুল, দ্বীন ইসলামকে গালাগালি করা, পর্দা, সালাত ইত্যাদিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা বা প্রকাশ্যে শিরকে লিপ্ত থাকে। আবার এসব অপরাধী ব্যক্তি তওবা না করেই মারা যায় তাহলে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত ও মুরতাদ। ওই ব্যক্তির জন্য কোনোভাবে এসব দোয়া করা যাবে না। আর তাদের জন্য দোয়া করা বৈধ হবে না।

এ প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কে একবার প্রশ্ন করা হয় যে- এক ব্যক্তি মারা গেছেন, কিন্তু সে জীবদ্দশায় মদ, জিনা, মানুষ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। তার মৃত্যুর পর কি সে রহমতের দোয়া পাওয়ার অধিকার রাখে?

জবাবে তিনি দুইটি উত্তর দিয়েছিলেন-
১. সে যদি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ঈমানদার মুসলিম হিসেবে সুপরিচিত থাকে কিন্তু তারপরও পাপাচারে আক্রান্ত থাকে তাহলে তাঁর জন্য দোয়া করতে বাধা নেই। আল্লাহ আমাদের এবং মুসলিমদেরকে ক্ষমা করুন।
তার জন্য মাগফেরাত (ক্ষমা) ও রহমত (দয়া) এর দুআ করা যাবে। কারণ পাপাচার মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে না। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতে মদ, জিনা বা এ জাতীয় গোনাহ ইসলাম থেকে বের করে না। কিন্তু সে হয় দুর্বল ঈমানদার।

২. আর সে যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ড দ্বারা পরিচিত থাকে; যে কর্মকাণ্ডের মধ্যে কুফরির প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন- দ্বীন-ইসলামকে গালি দেয়া, নামাজ অস্বীকার করা, জাকাত ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করা, ইসলামের বিধি-নিষধ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ইত্যাদি। তবে সে কাফের বা অস্বীকারকারী। তার জন্য দোয়া করা যাবে না। তার জন্য রহমতও কামনা করা যাবে না।

সুতরাং এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যারা দ্বীন ও ইসালামের ওপর আছেন এবং বিশ্বাস করেন, পাপাচারী হলেও জীবিত-মৃত উভয়ের জন্য এ দোয়াগুলো করা যাবে। আর যদি তারা ইসলামকে অস্বীকারকারী হয় তবে তাদের জন্য রহমত ও ক্ষমার দোয়া করা যাবে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবিত মুমিন মুসলমানের জন্য নেক হায়াত, হেফাজত ও বরকতের দোয়া করার তাওফিক দান করুন। মৃত মুমিন মুসলমানের জন্য রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার দোয়া করার তাওফিক দান করুন। ইসলামকে অস্বীকারকারী ব্যক্তির জন্য এসব দোয়া করা থেকে সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

আরও খবর পেতে দেখুনঃ দেশবাংলার সংবাদ –  ধর্ম ও জীবন 

Islamic News Update, Islamic News Update

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × two =

Back to top button