বড় জাহাজ চলাচলের সুবিধার্থে মংলায় ৭৯৪ কোটি টাকার ড্রেজিং শুরু
মোংলা বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারের সহায়তায় ৯.৫-১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করার লক্ষ্যে আজ মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি আজ মোংলা বন্দরের জয়মনিরগোল পয়েন্টে ড্রেজিং কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, পরিবেশ, বন ওজলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা এবং প্রকল্প পরিচালক শেখ শওকত আলী উপস্থিত ছিলেন ।
ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ৭৯৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হবে। ইনার বারে ২১৬.০৯ লক্ষ ঘন মিটার ড্রেজিং করা হবে। চীনের প্রতিষ্ঠান জিয়ানসু হাইহং কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (JIANSHU HAIHONG CONSTRUCTION ENGINEERING COMPANY LIMITED-JHCEC) এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন কর্পোরেশন (CHINA CIVIL ENGINEERING CONSTRUCTION CORPORATION-CCECC) যৌথভাবে ড্রেজিং কাজটি করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোংলা বন্দরটি বিগত বিএনপি সরকারের আমলে মৃতপ্রায় বন্দরে পরিণত হয়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ড্রেজিং করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বন্দরের বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং ড্রেজিং করার জন্য নানাবিধ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করে মোংলা বন্দরের আউটার বারে ড্রেজিং করা হয়েছে। আউটার বারে ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দরের এ্যাংকোরেজ এলাকা পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে আসতে পারবে। ইতোমধ্যে ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসা শুরু করেছে।
এতে করে বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি বন্দরের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, ইনার বারে ড্রেজিং সমাপ্ত হওয়ার পর বন্দরে আগত জাহাজের টার্ণ এ্যারাউন্ড টাইম কমে যাবে, পণ্য পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে। মোংলা বন্দরে জাহাজের সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নসহ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। মোংলা বন্দর ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে। যা বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মোংলা বন্দর সম্প্রসারণের জন্য ভারতীয় ঋণের আওতায় প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করেছে; যা অহংকার ও গর্বের। বঙ্গবন্ধু দুরদর্শি নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশকে আলোকিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে বাংলাদেশকে আলোকিত করে তুলছেন।
প্রধানমন্ত্রী সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করছেন। মর্যাদার জায়গায় নিয়ে গেছেন। অন্য দেশকে ঋণ সহায়তা দেয়ার সক্ষমতায় বাংলাদেশ পৌছে গেছে। উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগর হতে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর তীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত।
পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সংকটের কারণে মোংলা বন্দরের জেটিতে ৭.৫ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হতো না। ফলে এসব জাহাজ প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার খালাস করে ড্রাফট কমিয়ে মোংলা বন্দরে আসতো। এতে মোংলা বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের খরচ ও সময় বৃদ্ধি পায়।
মূলত এ কারণেই কন্টেইনারাইজড মালামাল আমাদানী-রপ্তানীতে ব্যবসায়ীগণ মোংলা বন্দর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করতো। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরেও সর্বোচ্চ ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা হচেছ। সে বিবেচনায় এই ড্রেজিং করা হলে মোংলা বন্দরেও সর্বোচ্চ ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দরের ড্রাফটের কোন পার্থক্য থাকবে না এবং মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের উপযুক্ত বিকল্প বন্দরে পরিণত হবে।
আরও খবর পেতে দেখুনঃ কর্পোরেট সংবাদ – আজকের বিশ্ব সংবাদ
Latest Breaking for Today, Latest Breaking for Today