বিচিত্র

একই দিনে জন্ম নেয়া চার বোনের একই দিনে বিয়ে!

Latest News Bd:  দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের চার বোন একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, একই ছাদের নীচে জীবন কাটিয়েছেন। একই রকম পোশাক পরা ছাড়াও ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত এক স্কুলে একই সারিতে বসতেন তারা। অবশেষে এই চার বোন একই দিনে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। খবর বিবিসির।

তবে এই চার বোনের একটি ভাইও রয়েছে। তারা এই পাঁচ ভাইবোন একই সঙ্গে পৃথিবীর মুখ দেখেন। একসঙ্গে জন্ম নেয়া পাঁচ শিশুকে চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় বলা হয় কুইন্টুপ্লেটস। জন্মের দিন থেকেই সবার আলাদা নজরে থেকে অভ্যস্ত তারা। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও তাদের কষ্ট ও দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের গল্প নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতো।

বিবিসিকে নিজেদের জীবনের গল্প শুনিয়েছেন উথ্রাজা, উথারা, উথামা, উথ্রা এবং তাদের ভাই উথ্রাজন। তারা পাঁচ ভাইবোন জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৯৫ সালের ১৮ই নভেম্বর। আগামী বছরের ২রা এপ্রিল চার বোনের একসঙ্গে একইদিনে বিয়ের পরিকল্পনা করছেন, সূত্র জাগো নিউজ।

উথারা বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে বেশিরভাগ কথাবার্তাই এখন বিয়ের বিষয় নিয়ে হয়। আমরা এখনও আমাদের সেই বিশেষ দিনটির জন্য সিল্কের শাড়ি কিনতে পারিনি। তবে আমরা একই নকশা এবং একই রঙের শাড়ি কিনবো।’ তিনি নিজে একজন সাংবাদিক এবং তার হবুও স্বামীও তাই। বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান হবে স্থানীয় রীতি ও ঐতিহ্য অনুসারে। সে হিসেবে এখানে বর-কনে নিজেরা নিজেদের বেছে নেয়ার পরিবর্তে পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা এখানে ঘটকের ভূমিকা পালন করেন। এক্ষেত্রে তাদের মা রেমা দেবী বিবাহ ‘ম্যাচমেকিং’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মেয়েদেরকে নিজেদের স্বামী বাঁছাইয়ে সাহায্য করেন।

এই ধরনের বিয়ে সাধারণত একই বর্ণ এবং একই অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন সদস্যদের মেলবন্ধন করে। জ্যোতিষীরা নববধূ এবং কনের রাশিফলগুলো পরীক্ষা করে এবং তাদের পরিবারকে জানায় যে সত্যিই তাদেরকে একে অপরের জন্য তৈরি করা হয়েছে কি-না।

তবে এসব কোনো জোরপূর্বক বিয়ে নয়। বর ও কনেদের নিজেদের মতামত দেয়ার সুযোগ রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার কারণে চারজন বরের মধ্যে তিনজন বাগদানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

দেখতে আলাদা এই চার বোন এখন চেষ্টা করছেন যে তাদের বিয়ের সমস্ত আয়োজন যেন দেখতে একরকম হয়। তারা জন্ম থেকেই সবকিছু একসঙ্গে করে আসছেন, যদিও তারা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেন এবং এ কারণেই তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব একজনের থেকে আরেকজনেরটা আলাদা।

উথ্রা, পড়াশোনায় পারদর্শী। উথামার আগ্রহ সংগীতে এবং তিনি বেহালা শিখতে শুরু করেছিলেন, তাদের ভাই উথ্রাজন তবলায় আগ্রহী। উথ্রা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। উথ্রাজা আর উথামা অ্যানেসথেশিয়া টেকনিশিয়ান হয়ে উঠেছেন।

যখন তারা নিজেদের জন্য স্বামী খুঁজতে করতে শুরু করেন, উথ্রাজা প্রথমে তার জন্য একজন সঙ্গী খুঁজে পান, তাও সেটা প্রায় এক বছর আগে। তবে তিনি তাড়াহুড়ো না করার সিদ্ধান্ত নেন। উথ্রাজ বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের মায়ের ইচ্ছা যে আমাদের বিয়ে যেন একই দিনে হয়। তাই আমরা অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ভারতীয় হিন্দু রীতিতে বিয়ের আয়োজনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় এবং অনেক পরিবার এই ব্যয় কমাতে চাচাত ভাই-বোন বা আপন ভাই-বোনদের একই দিনে, একই অনুষ্ঠানে বিয়ের আয়োজন করে। এই মেয়েদের জন্য চারটি আলাদা বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা তাদের মায়ের পক্ষে আর্থিকভাবে অনেক বড় বোঝা হবে।

তবে বোনরা বলছেন যে, এই যৌথ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের পেছনে তাদের মায়ের জেদ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে এক রকম সংবেদনশীল অনুভূতি। ভাগ্যক্রমে উথ্রারাজার ক্ষেত্রে, তার হবু স্বামী তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য কোন চাপ দেননি।

তিনি আকাশ কুমারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি নিজেও একজন অ্যানেসথেশিয়া টেকনিশিয়ান। তবে তিনি কাজ করেন মধ্যপ্রাচ্যে। উথ্রাজা বলেন, ‘আকাশ কুয়েতে যাওয়ার আগে আমরা একই হাসপাতালে কাজ করতাম। আমরা একে অপরকে চিনতাম। পরে তার পরিবার আমার মায়ের কাছে খুশি মনে প্রস্তাব নিয়ে আসে।’

তিনি দেশ ছাড়ার আগে তার বর্তমান চাকরিতে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা নিতে চান। তার মানে তিনি তার বিয়ের কয়েক মাস পরে তার স্বামীর সাথে বিদেশে পাড়ি দেবেন। বলেন, ‘এটি কিছুটা কঠিন এবং দুঃখজনক। সাধারণ কিছু ভয় কাজ করে। আমি কখনও বিদেশে যাইনি। আবার একই সঙ্গে বিয়ের কথা ভেবে আমি খুব আনন্দিত।’

উথ্রাজা আশা করেন যে তার পক্ষে কুয়েতে চাকরি পাওয়া সহজ হবে কারণ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত পুরুষদের সঙ্গে উথ্রা এবং উথামারও বিয়ে হচ্ছে। জীবনের নতুন এক অধ্যায়ে পা রাখা নিয়ে উচ্ছ্বসিত বাকি বোনরা এবং ভাই উথ্রাজনও খুশি।

তবে বিয়ের জন্য এই চারবোনের একমাত্র ভাইয়ের কোনও তাড়াহুড়ো নেই। পারিবারিক জীবন শুরু করার আগে তিনি কয়েক বছর বিদেশে গিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। বিয়ের এই পরিকল্পনা পরিবারটিকে তাদের অতীতের বেদনা থেকে বেরিয়ে আসতেও সহায়তা করছে।

তাদের বাবা-মা পৃথিবীর বুকে এমন পাঁচটি শিশু জন্ম দিতে পেরে আনন্দিত ছিলেন। বাড়িতে তারা এই সন্তানের নাম রেখেছিলেন পাঁচরত্ন। বাচ্চারা তাদের পড়াশুনায় ভাল করেছিল তবে তাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা ছিল এক বিশাল উদ্বেগের কাজ। যাতে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন সেই বাবা–মা।

তাদের মা রেমা দেবী অতীতের কথা মনে করে বলেন, ‘তারা প্রত্যেকেই অনেক কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ থাকায় তারা প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়তো।’ একসঙ্গে পাঁচ সন্তান লালন করতে গিয়ে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছিল তাদের বাবা-মা প্রেমা কুমার এবং রেমা দেবীকে। যার প্রভাব পড়ে রেমা দেবীর স্বাস্থ্যেও।

তাদের সামান্য কিছু জমানো অর্থ ছিল। তারা তাদের সমস্ত শক্তি ও সঞ্চয় ব্যয় করেছেন ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার পেছনে। কেননা ভারতীয় উপমহাদেশে ছেলে সন্তানকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়ার এক ধরনের প্রোথিত মানসিকতা রয়েছে।

আরও জানুনঃ বিবিধ, ও  আন্তর্জাতিক 

Tag: latest news bd, bd latest news

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =

Back to top button