ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির ইশরাক হোসেনের চেয়ে সম্পদে এগিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। আবার দায়-দেনায়ও এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৭ মেয়র প্রার্থীর দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য মিলেছে।
ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৬০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০২ জন (মোট ৫৬৯ জন) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার চলবে বাছাই। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রার্থিতা নিশ্চিত হবে ৯ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। প্রচার শেষে ভোটগ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি।
হলফনামায় তাপস
৪৮ বছর বয়সী (জন্ম ১৯ নভেম্বর ১৯৭১) শেখ ফজলে নূর তাপস সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত। ২০০২ ও ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলেও হাই কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।
শেখ ফজলুল হক মণি ও শামছুন্নেছা আরজু মণির ছেলে তাপস ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।
আয়ের উৎস: কৃষিখাতে ৩৫ হাজার টাকা; বাড়ি-এপার্টমেন্ট ভাড়ায় ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৮ টাকা; শেয়ার-সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৮ টাকা; আইন পেশায় প্রার্থীর বার্ষিক আয় ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও চাকরি বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় কৃষিখাতে ২২ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়ায় ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮২ টাকা, ব্যবসায় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮৮ টাকা ও আমানত ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ১২২ টাকা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় এক বছর আগে দেওয়া হলফনামায় সব মিলিয়ে প্রায় একই পরিমাণ অর্থের আয়ের খতিয়ান দিয়েছিলেন তিনি।
অস্থাবর সম্পদ: নগদ অর্থের মধ্যে তাপসের নিজের নামে ২৬ কোটি তিন লাখ তিন হাজার ৫৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯৭ লাখ ২০৬ টাকা রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণে নিজের নামে ৩৭৫০ ইউএস ডলার, স্ত্রীর নামে ৮৭০০ ইউএস ডলার থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ এক কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে দুই কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার ২৩৫ টাকা।
বন্ড এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে তাপসের নিজের ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।
সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকার; স্ত্রীর রয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি।
নিজের এবং স্ত্রীর ৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের গাড়ি রয়েছে। তাদের দুজনের দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার, ১০ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী, পরিবারের ১৭ লাখ টাকার আসবাবপত্রের তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে হলফনামায়।
অস্থাবর সম্পদ একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ের চেয়ে ব্যাংকে জমা ও আমানতে বিনিয়োগ কমেছে। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেড়েছে।
স্থাবর সম্পদ: তাপসের নিজের সাড়ে ১০ কাঠা ও স্ত্রীর ১১২ শতাংশ (৬ কোটি ৬৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬২০ টাকা মূল্যের) কৃষি জমি; ১০ কাঠা (৩৮ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকার মূল্যমানের) অকৃষি জমি ও স্ত্রীর নামে ১০ কাঠা (পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ২৪০ হাজার টাকার মূল্যের) অকৃষি জমি রয়েছে।
৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ টাকার মূল্যমানের আবাসিক/বাণিজ্যিক দালান রয়েছে তিনটি; স্ত্রী এবং নিজের নামে পৌনে চার কোটি টাকা মূল্যের তিনটি বাড়ি/ এপার্টমেন্ট।
অবশ্য বাড়ি ভাড়া বাবদ অগ্রিম নেওয়া ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা দায়-দেনা উল্লেখ করেন তিনি।
হলফনামায় ইশরাক
বিএনপি প্রার্থী ৩৩ বছর বয়সী ইশরাক হোসেন (জন্ম ৫ এপ্রিল ১৯৮৭) ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও ইসমত আরার ছেলে।
ইশরাকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং), পেশা ব্যবসা। তিনি সাদেক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বুড়িগঙ্গা ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, দিগন্ত প্রকৌশলী লিমিটেডের পরিচালক তিনি। ডাইনামিক স্টীল কমপ্লেক্স লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার এবং ট্রান্স ও শিয়ানিক ট্রেডিংয়ের মালিক ইশরাক।
ইশরাকের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলা বিচারাধীন।
আয়ের উৎস: বাড়ি বা এপার্টমেন্ট ভাড়া ৭৮ হাজার ৩০০ টাকা; ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা; শেয়ার/আমানতের সুদ ৪ লাখ ২৫ হাজার ৮২৪ টাকা; চাকরি থেকে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ টাকা; অন্যান্য আয় ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ: নগদ অর্থ ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা; ব্যাংক এবং আর্থিকখাতে তার জমাকৃত টাকার পরিমাণ এক কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা; শেয়ারবাজারে দুই কোটি ৯৬ লাখ টাকা; পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৪২ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা; এক লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী এবং এক লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকার আসবাবপত্র এবং অন্যান্য ২০ লাখ ২৪ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।
স্থাবর সম্পদ: ৩০ লাখ ২৫ হাজার ৬৫০ টাকা মূল্যের ৩৪.৫০ শতাংশ কৃষি জমি; ৩২ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ২৯.০৯ শতাংশ অকৃষি জমি; আবাসিক ও বাণিজ্যিক এবং এপার্টমেন্ট মিলিয়ে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে।
মায়ের কাছে ৬১ লাখ টাকার ঋণের সঞ্চিতি ও ক্রেডিট কার্ড, স্বল্প মেয়াদী ঋণ মিলিয়ে ইশরাকের দেনার পরিমাণ ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকা।
হলফনামায় সাইফুদ্দিন মিলন
জাতীয় পার্টির প্রার্থী ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন (জন্ম ২ মার্চ ১৯৬৫) স্বশিক্ষিত। পেশা ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
এ প্রার্থীর বাৎসরিক আয় এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি। আয়ের উৎস বাড়ি ভাড়া, এপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ৫৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরিবহন বাবদ ১৭ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্র ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও বীমার টাকা রয়েছে ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকা। এ
তিন ব্যাংকে দুই কোটি ৭৭ লাখ ৭ হাজার ৬০১ টাকার ঋণ রয়েছে। স্ত্রীর নামেও দুই কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।
অন্যান্য
আব্দুর রহমান: ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী ৬১ বছর বয়সী (জন্ম ৩ নভেম্বর ১৯৫৮) মো. আব্দুর রহমান স্বশিক্ষিত। পেশা ব্যবসা।
তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা থাকলেও আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তার বাৎসরিক আয় আট লাখ ২৩ হাজার টাকা। নগদ টাকা রয়েছে ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৮৮২.৮৫ শতাংশ কৃষি জমি এবং ৪ তলা একটি বাড়ী রয়েছে।
আকতারুজ্জামান: ৫১ বছর বয়সী আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ (জন্ম ১৫ মে ১৯৬৮) বাংলাদেশ কংগ্রেসের মেয়র প্রার্থী। বিএ পাস এ প্রার্থী পেশায় সাংবাদিক (আজকের দর্পনের বার্তা সম্পাদক)।
বাৎসরিক কোনো আয় না দেখালেও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের এবং স্ত্রীর কাছে নগদ অর্থ রয়েছে তিন লাখ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার ১৫ ভরি, ১৫০ মার্কিন ডলার ও কিছু আসবাব রয়েছে।
কোনো স্থাবর সম্পদ ও দায় দেনা দেখাননি তিনি।
আব্দুস সামাদ: গণফ্রন্টের প্রার্থী ৫০ বছর বয়সী (জন্ম ১৫ নভেম্বর ১৯৬৯) আব্দুস সামাদ সুজন এইচএসসি পাস। পেশা সাংবাদিকতা (রাজনীতি ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক শিরোমনি)।
এই প্রার্থীর বাৎসরিক আয় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। নিজের এবং স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এক লাখ ৫০ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে তিন বিঘা জমি, যার মূল্য ৩০ হাজার টাকা; এক কাঠা জমির উপর ৪ তলা একটি ভবনের অর্ধেক তার নিজের নামে।
বাহরানে সুলতান: ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রার্থী বাহরানে সুলতান বাহার। স্বশিক্ষিত এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মোট ৫টি মামলা থাকলেও তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এরমধ্যে দুটি মামলা বিচারাধীন।
বাৎসরিক আয় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। স্ত্রীর কাছে রয়েছে ৫ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার, সূত্র বিডি নিউজ।
আরও খবরঃ কূটনীতি ও শেখ ফজলে নুর তাপস
Tag: Latest online Bangla news, Latest Bangla news online