এক কোটি মুসলিমকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাব: বিজেপি নেতা
পশ্চিমবঙ্গে বাস করা ‘অবৈধ’ বাংলাদেশি মুসলিমদের দেশে ফেরত পাঠাব। রোববার এনআরসি প্রসঙ্গে ফের এভাবেই সরব হলেন দিলীপ ঘোষ। তার দাবি, ‘কেন্দ্রের সরকার এনআরসি বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আর আমরা পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে বাস করা এক কোটি বাংলাদেশি মুসলিমকে দেশে ফেরত পাঠাব।’ তার আরও অভিযোগ, ‘এই এক কোটি বাংলাদেশি সরকারের ভর্তুকিযুক্ত ২ টাকা কেজি প্রতি চাল প্রকল্প লুট করছে।’
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ শাখার বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন একই রাজ্যের তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। রোববার এক জনসভায় বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতির বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
উত্তর চব্বিশ পরগনায় দলীয় সভায় সেদিন বক্তব্য রাখেন ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের পশ্চিমবঙ্গ শাখা বিজেপি সভাপতি ও সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ। উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা সিএএ’র বিরোধিতা করছে তারা বাঙালিবিরোধী ও ভারতীয় মূল্যবোধের বিরোধী। তার অভিযোগ ‘এই এক কোটি বাংলাদেশি রাজ্যজুড়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে।’
এমনকি তাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা দিলেও তার কিছু যায় আসে না। রোববারের জনসভা থেকে স্পষ্ট করেন দিলীপ ঘোষ। পাশাপাশি তিনি আরও বলেছেন, যে যাই বলুক ধর্মীয় অসহিষ্ণু বলি হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্য তার আন্দোলন জারি থাকবে।
তিনি তার বক্তৃতায় সিএএ-বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের একহাত নিয়েছেন। যেসব বুদ্ধিজীবী সিএএ’র প্রতিবাদ করে পথে নামছেন, তাদের হৃদয় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কাঁদে, অভিযোগ করেন তিনি। কটাক্ষের সুরে তার প্রশ্ন, ‘হিন্দু উদ্বাস্তুদের কী হবে? ওদের কাছে কোনো জবাব নেই। এটাকে বলে দ্বিচারিতা।’
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ফলের আগাম পূর্বাভাস দিয়ে বিজেপি ওই নেতার দাবি, ৫০-এর বেশি আসন মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস পাবে না।
দ্বিতীয়বার বঙ্গ বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েই বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন এই দিলীপ ঘোষ। এমন অভিযোগ বিরোধীদের। সিএএ’র প্রতিবাদে পথে নামা বুদ্ধিজীবীদের ‘পরজীবী’, ‘শয়তান’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। সে নিয়ে বেশ হইচই হয়েছে।
এবার ফের ‘অবৈধ’ বাংলাদেশি মুসলিমদের দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলে, বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিলেন তিনি। এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের। এর আগে একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি। সিএএ প্রতিবাদীদের ‘গুলি করে’, ‘পিটিয়ে’ ঠাণ্ডা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
তার দলের সরকার ইউপি, কর্নাটক আর অসমে, প্রতিবাদীদের ‘গুলি করে মেরেছে’ এমন মন্তব্য করতেও পিছপা হননি দিলীপ ঘোষ। যদিও তার সেই মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে।
আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘আসানসোল-দুর্গাপুরে কখনও ভালো চিড়িয়াখানা তৈরি হলে সেখানে কোনো একটি ভালো খাঁচায় দিলীপ ঘোষকে আটকে রাখব। শিশুরা এসে তাকে দেখবে আর জানবে- এই সেই ব্যক্তি যিনি বাংলা সংস্কৃতিকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেছিলেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জনসংখ্যা গণনা (এনপিআর) পাসের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। আইনটিকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে এটি বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলন থামাতে জনতার ওপর চড়াও হয় সরকারের পেটোয়া বাহিনী। এতে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটির বিরোধিতায় বক্তব্য দিয়ে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্র : এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
আরও খবর পেতে এখানেঃ কূটনীতি
Tag: online breaking news, online breaking news today,