শিক্ষাঙ্গনসরকার

শিক্ষামন্ত্রীর ‘বাণী’ পেতে ৩ হাজার আবেদন পত্র

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ‘বাণী’ যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ উপলক্ষে মন্ত্রীর বাণীর জন্য আবেদন করলেও মিলছে না সহজে। গত এক বছরে এমন আবেদন জমা হয়েছে প্রায় তিন হাজারটি। উচ্চমহলের তদবিরে দুই-একটি প্রতিষ্ঠানের কপালে ‘বাণী’ জুটলেও অন্যরা মাসের পর মাস ছোটাছুটি করলেও খুলছে না ভাগ্য। অনেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যও আবেদন করে বাণী পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকেও শিক্ষামন্ত্রীর ‘বাণী’র জন্য আবেদন জমা পড়ার বিষয়টি আলোচনায় ওঠে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রোড়পত্র, ম্যাগাজিন, স্মরণিকাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর ‘বাণী’ প্রয়োজন হয়। নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগে আবেদন করা হয়ে থাকে এ বাণীর জন্য। এর মধ্যে মন্ত্রীর স্বাক্ষরসহ মন্ত্রণালয়ের একটি প্যাডে তার ‘বাণী’ দেয়া হয়।

বাণী-বঞ্চিত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রীর একটি বাণী পাওয়া ‘চরম সৌভাগ্যের’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে দুই থেকে তিন মাস আগে এ সংক্রান্ত আবেদন করেও শিক্ষামন্ত্রীর বাণী পাচ্ছেন না। দিনের পর দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসে ধর্ণা দিলেও তাদের ভাগ্যে তা মিলছে না। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করেও তারা মন্ত্রীর বাণী পাচ্ছে না। শুধু হচ্ছে-হবে বলে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। দীপু মনির বাণী না পাওয়ার তালিকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যও রয়েছেন।

জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজনে ম্যাগাজিন, ক্রোড়পত্রে শিক্ষামন্ত্রীর বাণী প্রয়োজন হয়ে থাকে। আয়োজনের আগেই সব ম্যাগাজিন-ক্রোড়পত্র তৈরির কাজ শেষ করা হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানের দিন তা শিক্ষার্থীসহ আগত অতিথিদের বিলি করা হয়। অথচ সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন জমা দিয়ে কয়েকমাস পার হয়ে গেলেও তাদের ভাগ্যে শিক্ষামন্ত্রীর বাণী মিলছে না। এজন্য অনেক প্রতিষ্ঠান আয়োজনই পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট সবাই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, আবেদন করে তিন মাস নানা তদবির করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মন্ত্রীর বাণী পেয়েছে। দুই মাস আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-সহ অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় তিন হাজার আবেদন পড়ে আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো শিক্ষামন্ত্রী, প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ অনেকের বাণী দিয়ে বার্ষিক ক্রোড়পত্র তৈরি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দীপু মনির বাণী না হলে ক্রোড়পত্র তৈরি করা সম্ভব হয় না। এজন্য দুই মাস আগে আবেদন করলেও তা এখনো মেলেনি। বাধ্য হয়ে সব কাজ ফেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সমাবর্তনের ক্রোড়পত্রে মন্ত্রীর বাণীর জন্য এক মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও কবে তা দেয়া হবে কেউ বলতে পারছেন না। অফিসের নম্বরে ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেন না। অনেক কষ্টে পাস নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ফেরত আসতে হচ্ছে।

ক্রোড়পত্র তৈরির সব কাজ শেষ হয়ে গেছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে মন্ত্রীর বাণী না পেলে তার চাকরি চলে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।

নাম না প্রকাশের শর্তে শিক্ষামন্ত্রীর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত এক বছরে শিক্ষামন্ত্রীর বাণীর জন্য প্রায় তিন হাজার আবেদন জমা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী অফিসে নিয়মিত নন বলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী নিয়মিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত না থাকায় এ মন্ত্রণালয়ের সব কাজকর্মে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে কিছু রুটিন কাজকর্ম ছাড়া আর কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নতুন উদ্যোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জরুরি ফাইল স্বাক্ষরসহ সব কার্যক্রমে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীর বাণীর জন্য আবেদনের স্তূপ জমা হয়েছে। যারা অনেক বড় মহল থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ফোন করাতে সক্ষম হচ্ছেন, তাদের ভাগ্যে বাণী মিলছে, অন্যরা ফিরে যাচ্ছেন। এ তালিকায় সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানই রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর স্বামী অসুস্থ হওয়ায় নিয়মিত তাকে ভারতে যেতে হচ্ছে। সেখানকার কাজের ফাঁকে তিনি অনলাইনের মাধ্যমে ফাইল স্বাক্ষরসহ কিছু কাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীর বাণী পেতে অনেকে আবেদন করেছেন। এ ধরনের বেশ কিছু আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। জরুরি বিবেচনা করে মন্ত্রী অফিসে এলে সেসব আবেদনে স্বাক্ষর করিয়ে তা আবেদনকারীদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী যাচ্ছেন তাদের বাণী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেয়া হচ্ছে। কেউ আবেদন করলেই তাকে বাণী দেয়া হচ্ছে না, যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রী স্বাক্ষর করে থাকেন। এ কারণে অনেক আবেদন জমে গেছে।

মন্ত্রীর দফতরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আগে মন্ত্রণালয়ে বাণীর জন্য আবেদন ১০টির বেশি কখনো জমা হয়নি। এ সংক্রান্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আবেদন করলে তিন দিনের মধ্যে তা বুঝিয়ে দেয়া হতো। বর্তমানে বাণী পেতে তিন মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জাগো নিউজ যোগাযোগ করলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি, সূত্র জাগো নিউজ।

আরও সংবাদ দেখুনঃ বিবিধডা. দীপু মনি

Tag: Online Newspapers of Bangladesh, Online Newspapers Bangladesh

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × two =

Back to top button