তথ্যপ্রযুক্তি

ফ্রিল্যান্সাররা শেষ পর্যন্ত ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা পেতে যাচ্ছেন

বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সহজে ঘরে বসে আয় করা যায় বলে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের অনেকেই এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এদিকে বাংলাদেশ সরকার এ খাতকে আরোও বেশি গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে সরকার প্রাতিষ্ঠানিক আউটসোর্সকে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ফ্রিল্যান্সারদের নগদ সহায়তা পাওয়ার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সেবা রপ্তানির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশ থেকে যে অর্থ আয় করে থাকে, তার বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করবে বাংলাদেশ সরকার। এজন্য অবশ্য ফ্রিল্যান্সারদেরকে সেবা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রমাণ দিতে হবে। অর্থমন্ত্রণালয় গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি এমন সুপারিশ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি ফ্রিল্যান্সারদের ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই প্রণোদনা পেতে ফ্রিল্যান্সারদের প্রমাণ করতে হবে যে, বিদেশে সেবা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স হিসেবে এনেছেন। কীভাবে ফ্রিল্যান্সাররা এটি প্রমাণ করবেন, এখন সেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনা করছে সরকার নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ।

অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ফ্রিল্যান্সারদের ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিতে গত অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবিরকে চিঠি দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে তা নাকচ করে দেয় অর্থবিভাগ।

পরে সালমান এফ রহমানের হস্তক্ষেপে ডিসেম্বরে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে অর্থবিভাগ। এছাড়া, ফ্রিল্যান্সারদের সেবা রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও গত মাসে অর্থবিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ওই কমিটি ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। তাদের সুপারিশ পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার ইস্যু করবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের মতো ফ্রিল্যান্সারদের রপ্তানির বিপরীতেও ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার পক্ষে ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা বলছিলেন, নগদ সহায়তা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার অডিট করে থাকে। সেখানে কোন অনিয়ম পেলে নগদ সহায়তা দেওয়া ব্যাংকগুলোকে ওই অর্থ সরকারকে ফেরত দিতে হয়। ফ্রিল্যান্সারদের অফিস না থাকায় প্রকৃতপক্ষে সেবা রপ্তানি হয়েছে কি-না, হলে কি পরিমাণ হয়েছে তা অডিট করা কঠিন।

তবে ফ্রিল্যান্সারদের যুক্তি ভিন্ন। তারা বলছেন, সেবা রপ্তানি পণ্য রপ্তানির চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেবা রপ্তানিতে কাঁচামাল আমদানি করতে হয় না, যা পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। তাই ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্সকে প্রবাসী আয় হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই। এটিকে রপ্তানি হিসেবে মূল্যায়ন করে আইসিটি পণ্য রপ্তানির মতোই ১০ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিতে হবে।

সালমান এফ রহমান জানান, সারাদেশে প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যারা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে গ্রামে থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। অনেক শিক্ষিত গ্রাজুয়েট প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

‘সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার জটিলতা দূর করেছে এবং তাদের রেজিস্ট্রেশন করে আইডেনটিটি দিচ্ছে। ১০ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিলে খাতটি বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সেবা রপ্তানিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে’- যোগ করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে আইসিটি সেবাখাত থেকে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে ব্যাংকিং চ্যানেলে।

এর মধ্যে কম্পিউটার ডাটা প্রসেসিং এন্ড হোস্টিং সার্ভিস থেকে রপ্তানি আয় এসেছে প্রায় ১৭২ মিলিয়ন ডলার। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সার্ভিস রপ্তানি করে থাকে সেগুলো এর বিপরীতে ১০% নগদ সহায়তা পায়। তবে ফ্রিল্যান্সাররা এসব সেবার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও কোন নগদ সহায়তা পান না। আর ফ্রিল্যান্সারদের প্রকৃত আয়ের পরিমাণ কতো, তার কোন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কাছে নেই।

২০১৯-২০ অর্থবছরে কম্পিউটার সফটওয়্যার  রপ্তানিতে ৭৩ মিলিয়ন ডলার ও কম্পিউটার কনসালটেন্সি সার্ভিসেস থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার সেবা হিসেবে আয় করে বাংলাদেশ, যার বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে আইসিটি সেবা রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮৮ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আইটি এক্সপোর্ট সার্ভিসেস থেকে এসেছে ৫৯ মিলিয়ন ডলার, কম্পিউটার সফটওয়্যার থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার এবং কম্পিউটার কনসালটেন্সি সার্ভিসেস রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার।

 

আরও খবর পেতে দেখুনঃ খোলা জানালা সংবাদ কেমন হওয়া উচিত ফ্যাশন 

Positive News Freelancer, Positive News Freelancer

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 1 =

Back to top button