র্যাবের নতুন প্রযুক্তি: অপরাধী শনাক্তে যেভাবে কাজ করবে ওআইভিএস
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব সম্প্রতি দ্রুততম সময়ে একজন ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করার জন্য অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম বা ওআইভিএস নামের একটি নতুন প্রযুক্তি দেশব্যাপী ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
চলুন জেনে নেই, প্রযুক্তি হিসেবে কার্যক্রম কেমন এই ওআইভিএসের? মূলত বহনযোগ্য একটি ডিভাইসের মাধ্যমে যে কোন জায়গায় থাকা কোনো ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা জন্ম তারিখের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয় এই সিস্টেমের মাধ্যমে।
এ ব্যাপারে র্যাবের কমিউনিকেশন্স ও এমআইএস উইংয়ের পরিচালক এবং এই সিস্টেমের একজন ডেভলপার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিবিসি বাংলাকে বলেন যে, অপরাধী শনাক্ত করার জন্য এই প্রযুক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করবে।
“এর আগে কোনো অপরাধীকে ধরলে তাকে র্যাবের একটি অফিসে নিয়ে গিয়ে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট, এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে হতো। কিন্তু এই ডিভাইসের মাধ্যমে যে কোন স্পটে একজন ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের কাজ করা সম্ভব।”
বর্তমানে এই সিস্টেমের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেইজ, অপরাধীদের ডেটাবেইজ এবং কারাগারের ডেটাবেইজে প্রবেশ করা সম্ভব বলে জানান কমান্ডার মঈন।
অর্থাৎ বহনযোগ্য ডিভাইসে কোনো ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ, এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রবেশ করালে উপরোক্ত ডেটাবেইজগুলোতে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে থাকা তথ্য দেখতে পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে এই ডিভাইসটি কাজ করবে।
তাছাড়া শীঘ্রই সরকারি নির্দেশনা ক্রমে পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও পুলিশের কাছে থাকা অপরাধীদের ডেটাবেইজেও এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রবেশ করা সম্ভব হবে বলে র্যাবের এই কর্মকর্তা আশা ব্যক্ত করেন।
অপরাধী শনাক্তকরণ ছাড়াও এই সিস্টেম বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারণ করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাস্তবে যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে:
তালিকাভুক্ত থাকা অপরাধীকে শনাক্ত করার পাশাপাশি র্যাবের এই নতুন ব্যবস্থা সন্দেহভাজনদের তালিকায় থাকা ব্যক্তি বা অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির মরদেহ শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান কমান্ডার মঈন।
“কিছুদিন আগে গাজীপুরে একজন প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়েছিল, যার মরদেহ পাওয়া যায় সাভারে। ওই মরদেহ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা এই ডিভাইসটি ব্যবহার করি,” বললেন তিনি।
সাধারণত মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর মরদেহের হাতে আঙ্গুলের ছাপ অক্ষত থাকে না এবং তখন ওই মরদেহ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মরদেহের পরিচয় শনাক্তের ক্ষেত্রে এই ডিভাইসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন তিনি।
এই র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান কিছুদিন আগে এই সিস্টেম ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়।
“কুমিল্লায় কিছুদিন আগে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি তার নিজের পরিচয় বলতে পারছিলেন না। পরে এই ডিভাইসের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়,” বলেন খন্দকার আল মঈন।
এই ডিভাইসের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী র্যাব। জনাব মঈন বলেন, “অনেক সময় অপরাধীরা মিথ্যা পরিচয় দেয়। তেমন ক্ষেত্রে এই ডিভাইস ও সিস্টেমের মাধ্যমে অপরাধীর আসল পরিচয় জানাও সম্ভব হবে।”
উপরন্তু, সন্দেহভাজন অপরাধী বা ব্যক্তির তথ্য এই সিস্টেমে এন্ট্রি করে রাখা যাবে।
বর্তমানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, এনআইডি ও জন্মতারিখের পাশাপাশি ছবির মাধ্যমে যেন ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়, সেই প্রয়াস চলছে বলে জানালেন কমান্ডার মঈন।
আরও খবর পেতে দেখুনঃ দেশবাংলার সংবাদ – ইতিহাসের ডায়েরী
Positive News of Technology, Positive News of Technology