‘আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত, আমি হেঁটে গেছি বিরাণ পথে…’ এই দীর্ঘ রাতের পথিক এখন একাই তিনি। ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও করি প্রেমের তর্জমা’- ভরাট কণ্ঠে এমন গানের তালে যিনি ভাসিয়েছিলেন, প্রেমের নতুন গল্প তুলে ধরেছিলেন, তিনিই সঞ্জীব চৌধুরী। আবার প্রেমিকার দিকে নরম অভিমান ছুঁড়ে বলেছিলেন, ‘পাগল রাগ করে চলে যাবে… খুঁজেও পাবে না, পাগল কষ্ট চেপে চলে যাবে… ফিরেও আসবে না’।
সৃষ্টিতে মগ্ন থাকা সেই পাগলটা চলে গেছেন। রাগ করে নাকি কষ্ট পেয়ে, সেটা হয়ত জানা যাবে না কখনো। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর যখনই ক্যালেন্ডারের পাতায় উঁকি দেয়, সঞ্জীব চৌধুরী গানপ্রিয় মানুষদের কাছে জীবন্ত হয়ে ওঠেন। সবার অগোচরে ভক্তদের কানে এসে গাইতে থাকেন ‘আমি তোমাকেই বলে দেবো, কী যে একা দীর্ঘ রাত, আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে…’।
হ্যাঁ আজ সেই দিন। গানপাগল সঞ্জীবের জন্মদিন। আর বিশেষ এই দিনে তাকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করছেন ভক্তরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে তাকালেই তার প্রতি মানুষের ভালোবাসার খানিকটা আঁচ পাওয়া যায়। ফেসবুক টাইমলাইনগুলো যেন সঞ্জীব বন্দনায় ভরে উঠেছে। তার গানের লাইন কিংবা ছবি শেয়ার করে স্মৃতিকাতর হচ্ছেন সেই সময়ের অনেক মানুষেরা।
সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে মাস্টার্স করে তিনি আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দেশের নামকরা বেশ কিছু পত্রিকায় তিনি দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন।
ছাত্রজীবনেই গানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সঞ্জীব চৌধুরী। ‘শঙ্খচিল’নামে একটি ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পথচলার শুরু। এরপর ১৯৯৬ সালে বাপ্পা মজুমদার ও আরও কয়েকজনকে নিয়ে গঠন করেন ‘দলছুট’ব্যান্ড। ব্যাস, তারপর থেকে সঞ্জীবের গান হয়ে ওঠে রুচিশীল তরুণদের মনের খোরাক। প্রেম-বিরহ কিংবা জীবনবোধ সবই উঠে এসেছে তার গানে। ‘দলছুট’ ব্যান্ড থেকে তিনি থাকাকালীন প্রকাশ হয় আহ্ (১৯৯৭), হৃদয়পুর (২০০০), আকাশচুরি (২০০২) এবং জোছনা বিহার (২০০৭) অ্যালবামগুলো।
সঞ্জীব চৌধুরীর কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- গাড়ি চলে না, বায়োস্কোপ, আমি তোমাকেই বলে দেবো, কোন মেস্তিরি বানাইয়াছে নাও, আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ, সাদা ময়লা রঙিলা পালে, কথা বলবো না, এই নষ্ট শহরে, রিকশা, চোখটা এতো পোড়ায় কেন প্রভৃতি। গায়কীর তুলনায় সঞ্জীবের লেখা ও সুরের প্রশংসা ছিলো বেশি। কারণ তার রচিত গান আর সৃষ্ট সুর অন্যদের থেকে একদমই আলাদা ছিলো। একটা মন মাতানো আবহ ছিলো সেসব সুরে।
শুধু সাংবাদিকতা আর গান নয়, লেখক হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। তার লেখা কবিতা নিয়ে প্রকাশ হয়েছে ‘রাশপ্রিন্ট’নামক একটি কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া কবিতা, ছোট গল্প, নাটকও লিখতেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব।
মানুষ হিসেবে সঞ্জীব চৌধুরীর ছিল সম্মোহনী ক্ষমতা, মানুষকে আপন করার নেওয়ার মতো ক্ষমতা। তিনি ভালোবাসতে পারতেন মানুষকে। সকলের সঙ্গে তার ছিল দারুণ সখ্য। তিনি যেমন ছিলেন নরম মানুষ ঠিক ততটাই অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
আরও খবর পেতে দেখুনঃ দেশবাংলার সংবাদ – খোলা জানালা
Sanjib Choudhury, Sanjib Choudhury