কমছে হ্যান্ডসেট আমদানি, বাড়ছে দেশে উৎপাদন
প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবার পরিধি বাড়ায় দেশে ক্রমেই গ্রাহক বাড়ছে স্মার্টফোন হ্যান্ডসেটের। বছরে স্মার্টফোন ও ফিচার ফোনের চাহিদা প্রায় তিন কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। আর সে সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে মেড ইন বাংলাদেশ (দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেট); অর্থাৎ দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন বাড়ছে আর কমছে আমদানি।
হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, বছরে তিন কোটি সাড়ে ১০ লাখ হ্যান্ডসেটের (ফিচার ও স্মার্ট) চাহিদা আছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্মার্টফোনের বাজার রয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার। যদিও সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে ফিচার ফোন। এর বাজারমূল্য প্রায় ৭০ শতাংশ। আর স্মার্টফোন রয়েছে ৩০ শতাংশ। তবে মূল্যমান অনুযায়ী মোট বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশই রয়েছে স্মার্টফোনের দখলে।
এদিকে দেশে হ্যান্ডসেট তৈরিতে গতি পাওয়ায় কমছে আমদানি। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, ২০১৮ সালে দেশে হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে স্মার্টফোন ছিল ২৪ লাখ ৪৪ হাজার। আর ২০১৯ সালে দেশে হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়েছে এক কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে স্মার্টফোন ছিল ৯ লাখ ৬৭ হাজার; অর্থাৎ এক বছরে দেশে হ্যান্ডসেট আমদানি কমেছে ৩৫ লাখ। আর স্মার্টফোন আমদানি কমেছে প্রায় ১৪ লাখ ৭৭ হাজার।
এদিকে ২০১৮ সালে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ। এর মধ্যে স্মার্টফোন ছিল সাত লাখ। আর ২০১৯ সালে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৭০ লাখ, যার মধ্যে স্মার্টফোন ২০ লাখ। অর্থাৎ, এক বছরে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩৬ লাখ এবং স্মার্টফোন উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১৩ লাখ।
হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, বর্তমানে স্মার্টফোন বাজারে কয়েক বছর ধরে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে স্যামসাং। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার প্রায় ৩৩ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে দেশীয় হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিম্ফনি। দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটি ফিচার ফোনের পাশাপাশি স্মার্টফোন তৈরি করায় এগিয়েছে তাদের অবস্থান। সিম্ফনির মার্কেট রয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে শাওমি, হুয়াওয়ে, অপো, নকিয়া ও ভিভো। শাওমির মার্কেট শেয়ার রয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ, হুয়াওয়ের প্রায় ১০ শতাংশ, অপোর প্রায় পাঁচ শতাংশ, নকিয়ার প্রায় তিন শতাংশ ও ভিভোর প্রায় দুই শতাংশ। বাকি প্রায় সাত শতাংশ শেয়ার রয়েছে অন্যান্য ব্র্যান্ডের, সূত্র শেয়ার বিজ।
জানতে চাইলে সিম্ফনির মূল প্রতিষ্ঠান ইডিসন গ্রুপের সহকারী পরিচালক এমএ হানিফ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি গ্রাহক সক্ষমতার ওপর প্রোডাক্ট তৈরি করতে। ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। এ বছরটি আমরা নিজেদের পোর্টফোলিও আরও শক্তিশালী করব। আমরা সিম্ফনি গ্রাহকের অভিজ্ঞতা আরও বেশি কাজে লাগাতে চাই।’
তিনি বলেন, দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়লেও ফিচার ফোন এখন শীর্ষে। বছরে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি ফিচার ফোনের চাহিদা রয়েছে। আর স্মার্টফোনের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৯০ হাজারের মতো। সিম্ফনি গ্রাহকের জন্য দুই ধরনের হ্যান্ডসেট নির্মাণ করতে পারায় ধীরে ধীরে আরও সমৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে।
দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে কর ও শুল্কনীতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য ট্যাক্স-নীতি প্রণয়ন করা হয়। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে তা সংশোধন হয়। এতে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও এর যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। হ্যান্ডসেট উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা কিছুটা সাড়া ফেলে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশে লাইসেন্স নিয়ে ১০টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: স্যামসাং, সিম্ফনি, ওয়ালটন, ট্রানশন (টেকনো ও আইটেল), ফাইভস্টার, ইউনস্টার, অপো, ভিভো, টেসিশ মোবাইল (ওকে মোবাইল) ও লাভা। এছাড়াও চলতি মাসেই উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে উই হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের।
এ প্রসঙ্গে এমএ হানিফ বলেন, বাজেটে যদি খুব পরিবর্তন না করে লম্বা সময়ের জন্য, অর্থাৎ ১০ বছর বা পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থায়ী ভ্যাট ও ট্যাক্স নির্ধারণ করে, তাহলে একদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হবে, অন্যদিকে প্রোডাক্টও সহজলভ্য হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে দেশে কারখানা স্থাপন করে সেখানে সংযোজিত হ্যান্ডসেট বাজারে এনেছে ওয়ালটন, সিম্ফনি, স্যামসাং, আইটেল-ট্রানশন, ইউনস্টার ও ফাইভস্টার।
এদিকে বিক্রয়ডটকমের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত হ্যান্ডসেট স্যামসাং। এরপর রয়েছে সিম্পনি, শাওমি ও হুয়াওয়ে। শীর্ষ পাঁচের অপর ব্র্যান্ডটি হলো আইফোন।
যদিও গ্রাহক সবচেয়ে খুঁজে থাকে শাওমি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। তার পরের অবস্থানে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা ফোনগুলো হলো স্যামসাং ও আইফোন। যদিও এ ব্র্যান্ডগুলো মূলত বিলাসবহুল ও দামি ফোনের জন্য বিখ্যাত। এরপরই আসে নকিয়া, হুয়াওয়ে, ভিভো ও অপোর নাম। যদিও বেশ লম্বা সময় পর নতুন রূপে স্মার্টফোনের দুনিয়ায় পা রেখেছে চিরাচরিত নকিয়া। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোনে ততটা জায়গা দখল করতে পারেনি, যতটা তাদের দখলে ছিল ফিচার ফোন।
আরও খবরঃ ফ্যাশন – ২০২০ সালে চমক দেবে যে ৬ ফোন
Tag: Smartphone news, Smartphone news update, smartphone news today