Breakingধর্ম ও জীবন

অতিবৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচার সুন্নাতি আমল

বৃষ্টি অবশ্যই মহান আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। কারণ বান্দার প্রতি খুশি হলে আল্লাহ তাআলা তিনটি জিনিস দান করেন। তন্মধ্যে একটি হলো বৃষ্টি। বৃষ্টির মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতে প্রাণ সঞ্চার ও রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তবে অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টি কল্যাণকর নয়। তা মানুষের অবাধ্যতার পরিণতি।

অতিবৃষ্টির ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে মহান আল্লাহর রহমতের বিকল্প নেই। তিনি চাইলে বান্দাকে অতিবৃষ্টির ক্ষতি থেকে হেফাজত করতে পারেন। এ কারণে সুন্নাতের অনুসরণে মুমিন বান্দার রয়েছে কিছু করণীয়। তাহলো-

১. আল্লাহর রহমত কামনা করা
বৃষ্টি যেমন রহমত তেমনি অবাধ্যতার কারণও বটে। তাই বৃষ্টির সময় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো কল্যাণের দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, বৃষ্টি হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا
উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।’ (বুখারি, নাসাঈ)
সুতরাং অতিবৃষ্টির সময় উক্ত দোয়া পড়ে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত আদায় করতে পারি।

২. আল্লাহকে ভয় করা
অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ঝড় তুফান শুরু হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারায় আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠতো। তিনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতেন। আবার (স্বাভাবিক) বৃষ্টি হলে তিনি খুশি হতেন; তার কোনো অস্থিরতা থাকতো না। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন- আমার আশঙ্কা হয় যে, আমার উম্মতের ওপর কোনো ‘আজাব’ এসে পতিত হয় নাকি। তিনি বৃষ্টি দেখলে বলতেন-
رَحْمَةً : ‘রহমাতান’- এটা (আল্লাহর) রহমত। (মুসলিম)
সুতরাং বৃষ্টির সময় রাহমাতান বলে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত আদায় করতে পারি।

৩. বৃষ্টি বন্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করা
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দুই হাত তুলে (এভাবে) দোয়া করলেন-
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা বেরিয়ে রোদে চলতে লাগলাম।’ (রাবী) শরিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম- এ লোকটি কি আগের সেই লোক? তিনি বললেন, আমি জানি না।’ (বুখারি)
সুতরাং অতিবৃষ্টিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণে উল্লেখিত দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।

মনে রাখতে হবে
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বৃষ্টির পানির সৃষ্টি সম্পর্কে বান্দার প্রতি প্রশ্ন রেখে এভাবে আয়াত নাজিল করেছেন-
‘তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে কি ভেবে দেখেছ? তোমরাই কি মেঘ থেকে তা বর্ষণ কর, নাকি আমি বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবু কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৮-৭০)

মানুষের খাওয়া ও উপকার পাওয়ার জন্য পানির সবচেয়ে নিরাপদ উৎস হলো বৃষ্টি। আর বৃষ্টির ফলেই উর্বর হয় মাটি। মাটির বুক চিরে জন্মে তরুলতা, গাছপালা, নয়নাভিরাম শস্য ও ফলমূল। বৃষ্টির পানির মাধ্যমেই মানুষ ও পশুপাখির জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সব রিজিকের ব্যবস্থা হয়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত স্বাভাবিক বৃষ্টি হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি বৃষ্টির রহমতের পানি যেন গজবে পরিণত না হয় সে জন্য বৃষ্টিপ্রাপ্তির পর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা। অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

৪. গোনাহ ছেড়ে দেওয়া
কেননা মানুষের পাপের কারণেও অতিবৃষ্টি হয়। যেমনটি এসেছে কুরআনের বর্ণনায়-
‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৩০)

সুতরাং বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণে হাদিসে বর্ণিত এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-
اَللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَ لَا عَلَيْنَا- اَللَّهُمَّ عَلَي الْأَكَامِ وَ الْجِبَالِ والْاُجَامِ وَالظِّرَابِ وَالْأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশে বৃষ্টি বর্ষণ কর। আমাদের ওপরে করিও না। হে আল্লাহ! টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনাঞ্চলে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অতিবৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচতে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 3 =

Back to top button