Lead Newsজাতীয়রাজনীতিসরকার

অবরোধে স্থবির দেশ; চলছেনা দূরপাল্লার বাস, রাজধানীর যান চলাচল সীমিত

বাস মালিকের নির্দেশে ভোর পাঁচটায় কাউন্টার খুলেছেন মমিন। সকাল থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে দিগন্ত পরিবহনের কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ট্রিপ ঢাকা-গোপালগঞ্জ রুটে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু অবরোধের কারণে যাত্রী নেই। সকাল থেকে চা খাওয়ারও টাকা জোটেনি মমিনের।

ঢাকা-গোপালগঞ্জ, কাজুলিয়া, কোটালীপাড়া রুটে চলাচলকারী দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মমিন বলছেন, ‘বাস চললে তো আমার লস না, লাভ। বাস না চললে মালিকের ১০ দিনেও কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু আমার তো লস। আমরা যারা দিন আনি, দিন খাই তাদের অবস্থাটা কে দেখবে বলেন? কোনো স্টাফকে ছুটি দিইনি। একটু পরে তো ওরা আইবো, বলবো আপনি থাকতে কইছিলেন থাকতেছি, এখন খোরাকির টাকাটা দেন। এখন বলেন বাস না চললে, আমি খামু কি আর ওদেরই বা কোত্থেকে দিমু?’

শুধু মমিন কিংবা দিগন্ত পরিবহন নয়, পুরো গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের চিত্র এমনই।

রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, খাঁ খাঁ করছে বাস টার্মিনাল, অনেক কাউন্টার খোলা থাকলেও নেই কোনো স্টাফ। যাত্রী না থাকায় অনেক কাউন্টার রয়েছে বন্ধ। যেসব কাউন্টার খোলা রয়েছে তারাও হা-হুতাশ করছেন যাত্রীর অভাবে। কেউ খোশগল্প করছেন, কেউ আবার লুডু খেলে অলস সময় পার করছেন।

দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মমিন বলেন, ‘যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে সকালে ১৫টা পর্যন্ত ট্রিপ চলে। গতকালও (শনিবার) যাত্রী ছিল বেশ। আজ কোনো যাত্রী নেই। কোনো ট্রিপ যায়নি। আপনি যেখানে আমিও সেখানে, দেখেন টার্মিনাল ঘুরে। কি অবস্থা, খাঁ খাঁ করছে পুরো টার্মিনাল।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মালিকের চাকরি করি। মালিকের নির্দেশে কাউন্টার খুলেছি। যাত্রী আসবে বাস চলবে, দুই-চার পয়সা পাব, বাজার-সদাই করে বাসায় গিয়ে খাব। সকাল থেকে চা খাওনের টাকাটাও তো জুটেনি। ট্রিপের টাকা তো দূরের কথা।’

প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাস কাউন্টারে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় দেলোয়ার হোসেনের নামের এক যাত্রীকে। ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করা দেলোয়ার জরুরি প্রয়োজনে গ্রামের বাড়ি নওগাঁ যাওয়ার উদ্দেশে টার্মিনালে এসেছেন।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এক ঘণ্টা হলো গাবতলী বাস টার্মিনালে আসছি, ঘোরাফেরা করতেছি কিন্তু কোনো বাস যাইতেছে না। জরুরি দরকার। হানিফ বাসে অনেক করে রিকোয়েস্ট করলাম কিন্তু যাইব না। বাকি কাউন্টারগুলো অনেকগুলো বন্ধ, কোনোটা যাত্রী না থাকায় যাচ্ছে না।’

কি করবেন এখন– এমন প্রশ্নের উত্তরে দেলোয়ার বলেন, বাড়ি আমাকে যেতেই হবে অপেক্ষা করব। কিছু বাস রাতে যাওয়ার কথা। ঝুঁকি থাকলেও কিছু করার নাই।

দক্ষিণবঙ্গে চলাচল করা হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের স্টাফ শুভ বলেন, ‘গতকালও অনেক যাত্রা ছিল কিন্তু আজ যাত্রী নেই অবরোধের কারণে। বাস সিরিয়ালে রাখা হয়েছে। কিন্তু যাত্রী নাই চলব কেমনে? সকাল থেকে শুধু একজন যাত্রী এসে জিজ্ঞেস করছে যাইব কি না।’

তিনি বলেন, এতক্ষণে তো পাঁচ ট্রিপ চলে যেত কিন্তু আজ একটাও যায়নি। মানুষ ভয়ে বাইরে বের হচ্ছে না, বাস চলবে কীভাবে?

ঢাকা থেকে ফরিদপুর, বরিশাল, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা রুটে চলাচল করা সূর্যমুখী পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, মোবাইলে লুডু খেলছেন দুই স্টাফ। যাত্রী না থাকায় সকাল থেকে পাঁচ ট্রিপের কোনোটি ছেড়ে যায়নি।

কাউন্টার স্টাফ মো. নুরু বলেন, ‘ভোর পাঁচটায় কাউন্টার খুলে বসে আছি। অথচ একজন যাত্রী আইসা কইল না যাবে নাকি? একটি টিকিট দেন। যাত্রীই আমাদের বিজনেস। এইটা শুধু আমার না, টার্মিনাল ঘুরেন বুঝতে পারবেন। কোনো বাস যাইতেছে না। যাত্রী নাই।’

সেলফি পরিবহনের চালক আসাদুল বলেন, গতকালও অনেক যাত্রী ছিল। আজ যাত্রীর দেখা নেই। গাবতলীতে মশা মারার দশা। যাত্রী ছাড়া বাস চালাব কীভাবে। সকাল থেকে ট্রিপ মারতে পারিনি। দুই-চার জন যাত্রী পেয়েছি, সাভার পর্যন্ত যাবে। বাস পার্ক করব, মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যাব সে যাত্রীই নেই।

অথচ বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধে ঢাকাসহ সারা দেশে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শনিবার (৪ নভেম্বর) সংবাদ মাধ্যমে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকারের পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে সামদানী খন্দকার বলেন, দূরপাল্লার বাস চলছে না কারণ যাত্রী নেই। যাত্রী ছাড়া বাস চালানো তো লস। তবে বাস যে চলছেই না ব্যাপারটা এরকম না। কম হলেও গাজীপুর, সাভার, বাইপাইল, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ এদিক থেকে বাস রাজধানীতে ঢুকছে, চলাচল করছে।

পরিবহন খাতে হাজার হাজার মানুষের দিন চুক্তি খোরাকি। বাস না চললে স্টাফ বা কর্মীদের খোরাকি কীভাবে দিচ্ছেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসই যদি না চলে তবে খোরাকি দেব কোত্থেকে। কোনো কোনো মালিক হয়ত দিচ্ছেন কিন্তু সামগ্রিকভাবে এটা সম্ভব না।

সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, আমাদের নির্দেশনা আছে বাস চলবে। কিন্তু যাত্রী তো নাই, বাস কেমনে চলবে। বাসের স্টাফ-কর্মীদের আপাতত আমরা কিছু পকেট থেকে খোরাকি দিচ্ছি। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে কি হবে জানি না, আল্লাহ ভালো জানেন। বেশি দিন এভাবে খোরাকি দেওয়াও সম্ভব না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =

Back to top button