ছবি তোলাই তার একমাত্র কাজ। মানুষের দুর্ভোগের সব চেহারাই দেখেছেন তিনি। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ছবি তোলার জন্য ঘর থেকে বের হন।
আজকেও তিনি অন্যান্য দিনের মতো ছবি তোলার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে তিনি ভিন্ন এক দৃশ্যের মুখোমুখি হন।
তিনি জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক রোহাত রাজিব।
রাজিব দেখতে পান এক মা তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। আর এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন ছেলেটির বাবা। যেহেতু ছবি তোলাই তার সেহেতু আরও অনেক ঘটনার মতোই ছোঁ মেরে ক্যামেরা তুলে নিয়ে দৃশ্যগুলো প্রথমে ফ্রেমবন্দি করেন তিনি। এরপর নিজেকে সংবরণ করতে পারেননি তিনি। এগিয়ে যান ক্রন্দনরত মায়ের দিকে। ইতোমধ্যে ছেলেটির বাবাও চলে আসে সেখানে। রাজিব কান্নার কারণ জানতে চান।
অসুস্থ ছেলেটির বাবা আব্দুল আজিজ জানান, তার ছেলে তিনি মাস ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছেন। মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। এই মাসের শুরুর দিকে ছেলেকে নিয়ে যশোরের গ্রামের বাড়ি চলে যান। সেখানে ছেলের জ্বর হলে করোনা টেস্ট করান। সেই রিপোর্টসহ ছেলেকে নিয়ে আবার ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন। সেখানে ডাক্তাররা ছেলেকে আগে করোনার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বলেন। এরপর ঢাকার অনেক হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসেন। কিন্তু ভর্তির জন্য কোনোভাবে সিরিয়াল পাচ্ছেন না তারা। এমন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাবেন এবং কি করবেন সেই চিন্তায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন তার মা। টাকাও নেই তাদের কাছে।
সাংবাদিক রাজীবের আর মন মানলো না। ছবি তোলার কাজ বন্ধ রেখে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি ষ্টারের ফটো সাংবাদিক আনিসুর রহমানকে নিয়ে ছুটলেন কর্তৃপক্ষের কাছে। ভর্তির জন্য সব ব্যবস্থা করে দিলেন। দিলেন অর্থ সহায়তাও।
দুই সাংবাদিকের কাছে এমন সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে আব্দুল আজিজ কৃতজ্ঞতার ভাষা হারিয়ে ফেলে করোনার সংক্রমণের কথা ভুলে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন সাংবাদিক রাজিবকে। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় সেখানে।
এই দৃশ্য ফ্রেমবন্দি করেন ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের ফটো সাংবাদিক সৌরভ লস্কর। তিনি বলেন, ‘আমরা ফটো সাংবাদিক। ছবি তোলাই আমাদের কাজ। কিন্তু ছবি তুলতে গিয়ে অনেক সময় সাংবাদিকতা ভুলে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। রোহাত রাজিব এবং আনিসুর রহমান আজ যা করেছে সেটা আবারও প্রমাণ করল ফটো সাংবাদিকরা শুধু ছবিই তুলে না তারা মানবিক মানুষ হিসেবে মানুষের পাশেও দাঁড়ায়।’
সৌরভ আরও বলেন, ‘মানুষের বিপদের সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করাই মানুষের ধর্ম হওয়া উচিত। একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে যদি একটি প্রাণ বাঁচে; একজন মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে—তাতেই হয়তো জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সে কথা ভেবেই হয়তো রোহাত রাজিব এবং আনিসুর রহমান অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে।’