সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মেদ আল জাদান সম্প্রতি জানিয়েছেন, এ বছর ২২ হাজার কোটি সৌদি রিয়াল ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ঘোষণা জানান দিচ্ছে, দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা কতটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে এবং একই সঙ্গে দৃশ্যমান করছে সরকারের আকাশচুম্বী ঋণের বোঝা। অথচ বছর কয়েক আগে এই সৌদি আরবই বিশ্বের সর্বনিম্ন ঋণগ্রহীতা দেশের অন্যতম ছিল।
আরব দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটির এমন অবস্থার পেছনে ইয়েমেনে যুদ্ধে জড়ানোকে অন্যতম কারণ বলা হচ্ছিল। এখন নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে তেলের বিশ্ববাজার পড়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেল রপ্তানিতে পৃথিবীর শীর্ষ দেশটির সামনের দিনগুলো আরো দুর্দশার হবে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
এ ছাড়া করোনায় হজ ও ভ্রমণ বন্ধ থাকায় সারা দুনিয়া থেকে মক্কা-মদিনায় মুসলমানদের আগমন বন্ধ থাকায়ও দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
করোনার নতুন সংকটের আগেই বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ সে বছর সৌদি আরবের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে, এ বছর এ সংখ্যা আরো বাড়তে যাচ্ছে। ঋণের পরিমাণটা যেমন, তেমনি প্রতিবছর ঋণ বাড়ার হার ভয়াবহ।
২০১৪ সালে ইয়েমেন যুদ্ধ শুরুর আগে সৌদি আরবের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র এক হাজার ২০০ কোটি ডলার। গত পাঁচ বছরে ঋণ নেওয়ার হার এক হাজার ৫০০ শতাংশ বেড়েছে।
লন্ডনভিত্তিক সাংবাদিক মোহাম্মদ আয়েশ গতকাল শুক্রবার মিডল ইস্ট আই অনলাইনে এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, নিজের অর্থনৈতিক সমস্যার চাপ শুধু সৌদি আরবের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গোটা আরব অঞ্চলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
ইয়েমেন যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে রিজার্ভও কমেছে ব্যাপক হারে। ২০১৪ সালে সৌদি আরবের রিজার্ভ ছিল ৭৩ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে এসে তা ৪৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। পাঁচ বছরে ২৩ হাজার ৩০০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কমেছে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতি ও ক্ষমতাধর ২০ দেশের জোট জি-টোয়েন্টির একমাত্র আরব সদস্য দেশের।
সাংবাদিক মোহাম্মদ আয়েশ লিখেছেন, করোনাভাইরাসের আগেই গত পাঁচ বছরে এ বিপুল পরিমাণ রিজার্ভের অর্থ গায়েব হয়েছে। করোনায় তেলের বাজার পড়ে যাওয়ায় নতুন সংকটের ফলে এ প্রশ্নটি হয়তো আর তোলা হবে না।
ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন ২০৩০ প্রকল্পের মাধ্যমে আশা দেখানোর চেষ্টা করা হলেও দেশটির অর্থনৈতিক সংকট দিয়ে উদ্বেগ কমছে না। করোনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার হুমকি সামনে রেখে বাড়তে বৈদেশিক ঋণ আর জাতীয় রিজার্ভ কমার চিত্রে সৌদিদের উদ্বেগ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।