Lead Newsদেশবাংলা

আগুন জ্বলছে ১৭ ঘন্টার বেশি সময় ধরে

 

রূপগঞ্জের সজিব করপোরেশনের সেজান জুস কারাখানায় প্লাস্টিক ও দাহ্য পদার্থ এবং কেমিক্যাল থাকায় দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আগুন জ্বলছে। এরই মধ্যে আগুনে কারখানার নিচতলা থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত ভবনের ভেতরে রক্ষিত সব মালামাল ও মেশিনারিজ পুড়ে নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আগুন লাগা ভবনের শ্রমিকরা জানান, পাঁচতলা বিশিষ্ট সেজান জুসের কারখানায় বিপুল পরিমাণ তৈরি জুস, নিচতলায় কার্টন এবং পরিত্যক্ত মালামাল, তৃতীয় তলায় প্লাস্টিক গলানোর হিট মেশিন, চারতলায় পশ্চিম পাশে স্টোর রুমে বিপুল পরিমাণ তৈরি প্যাকেট এবং প্যাকেট তৈরির কাঁচামাল ছিল। ছিল এসব কাজে ব্যবহার করার জন্য বিপুল পরিমাণ ক্যামিক্যাল।

তাই আগুন লাগার দেড় ঘণ্টা পর পাঁচতলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের দড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসা শ্রমিক তাজুল ইসলাম জানান, কারখানার ভেতরে নুডুলস, জুস, চকলেট, কেক তৈরি এবং এসব পণ্য প্যাকেটজাত করার জন্য প্লাস্টিকের বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত ছিল। যে কারণে নিচতলায় কার্টনের মধ্যে লাগ আগুন কিছু বুঝে উঠার আগেই ছড়িয়ে পড়ে কারখানা জুড়ে।

তাজুল ইসলাম আরও জানান, বিকাল পাঁচটার দিকে স্টোররুম থেকে কিছু মালামাল আনার জন্য যাই। এ সময় নিচ থেকে আগুন আগুন বলে শ্রমিকদের চিৎকার শুনি। সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে চেয়ে দেখি ধোঁয়া আর ধোঁয়া। এমন ধোঁয়া আর আগুনের তাপ যে, কোনও অবস্থাতেই নিচে নামার সুযোগ মিলেনি। পরে বাধ্য হয়ে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলার ছাদের ওপর পানির ট্যাংকির উপর গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখানে আমার মতো আরও ১৩-১৪ জন শ্রমিক আশ্রয় নেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উপরে দড়ি দিলে আমরা তা বেয়ে নিচে নেমে আসি। তিনি আরও বলেন, আমার সবাই দড়ি বেয়ে নিচে নামি। আগুন যখন জ্বলছিল তখন জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে বার বার আল্লাহকে ডাকছিলাম। মা-বাবার দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতের কারণেই জীবন নিয়ে বাঁচতে পেরেছি।

আগুন ছাদ থেকে বেঁচা আসা আরেক শ্রমিক নাজির হোসেন জানান, আগুন লাগার পর প্রচণ্ড ধোঁয়া এবং তাপের কারণে নিচের দিকে নামতে পারছিলাম না। পরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাই। কিন্তু উপর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম আগুন ভবনের দুই-তিন দিক দিয়ে জানালা ভেদ করে বাইরে বের হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলছে। ফলে এই অবস্থায় জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরে দড়ি বেয়ে অন্য শ্রমিকদের মতো নিচে নেমে আসি।
তিনি আরও বলেন, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হলো ফ্যাক্টরিতে থাকা প্লাস্টিক ও দাহ্য পর্দাথ। এসবর কারণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সালেহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, সজিব করপোরেশনের সেজান জুস কারখানার ভেতরে বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল, প্লাস্টিক, কার্টন ও কাগজ ছিল। যে কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
তিনি আরও বলেন, এসব দাহ্য পদার্থের কারণেই আগুন নেভাতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভেতরে ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার ভুলতার কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির কার্টন ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের চেষ্টায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + 12 =

Back to top button