নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস পর আজ রোববার শুরু হচ্ছে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এতে অংশ নিচ্ছে ২২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী। এ বছর সারা দেশে কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৬৭৯টি। গত বছরের থেকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর তিন হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে মোট ২৯ হাজার ৩৫টি স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ৯টি সাধারণ বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৭ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের ১৮ লাখ ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী। অন্য দিকে ৯ হাজার ১১০টি মাদরাসার তিন লাখ এক হাজার ৮৮৭ জন পরীক্ষার্থী ৭১০টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবে দুই হাজার ৩৪৯টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন।
এ দিকে সবচেয়ে বড় এই পাবলিক পরীক্ষাটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। নকলমুক্তভাবে পরীক্ষা আয়োজন করতে এক সপ্তাহ আগে থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে দীর্ঘ বিরতির পর শুরু হতে যাওয়া এসএসসির পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নজর দিয়ে এবার বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে কেন্দ্রগুলো। একই সাথে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য পরীক্ষা শুরুর আগে ও চলাকালে করণীয় নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকার বেশকিছু কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা বলছেন, পরীক্ষার সব ধরনের প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বেঞ্চে দুইজন করে বসানো হবে পরীক্ষা কেন্দ্রে।
করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করিয়ে এবং তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করতে হবে। কারো শরীরের তাপমাত্রা বেশি এলে এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা রুমে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেজন্য আইসোলেশন রুমও প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। উল্লেখ্য, এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে দেড় ঘণ্টায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে আগামী ডিসেম্বর মাসেই এই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে।
অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনায় বলা হয়েছে- পরীক্ষার্থীর সাথে একজনের বেশি অভিভাবক কেন্দ্রে আসতে পারবেন না। একই সাথে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে।
অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর পরীক্ষা কেন্দ্রে এলে রেজিস্ট্রারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। বিলম্বে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবেন।
পরীক্ষা পরিচালনায় যারা থাকবেন তাদের জন্য নির্দেশনায় বলা হয়েছে কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না। অনিবার্য কারণবশত কোনো পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজরদারি জোরদার করবে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক সাথে নিয়ে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়াও অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বাড়ানোসহ শিক্ষক অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।