Breakingধর্ম ও জীবন

জুমাতুল বিদা আসলে কি? ইসলামে এর গুরুত্ব কতটুকু?

জুমাতুল বিদা— রমজান মাসের শেষ জুমাকে বলা হয়। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কিছু মানুষের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বছরের শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের শেষ জুমা হওয়ার কারণে এটি তাদের মতো অনেকের কাছে মর্যাদাশীল।

তবে জেনে রাখা উচিত, জুমাতুল বিদা নামে কোনো পরিভাষা শরিয়তে নেই। এটি পরবর্তী সময়ে আবিষ্কৃত একটি বিষয়। এছাড়াও এই দিনে কোনো নির্দিষ্ট নামাজ ও বিশেষ কোনো আয়োজন যদি কেউ করে থাকেন, সেটাও নব আবিষ্কৃত হিসেবে গণ্য হবে; শরিয়তে যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।

আর কোরআন ও হাদিস এবং সালফে সালেহিন, মুসলিম মনীষী ও ইসলামিক জ্ঞানবেত্তাদের প্রকৃষ্ট মতামত হলো- আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর নামাজ-রোজা ও অন্যান্য যেসব ইবাদত ফরজ করেছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরি। এছাড়াও রাসুল (সা.) যেসব সুন্নত ও নফলে অভ্যস্ত ছিলেন, সেগুলোর প্রতি আন্তরিক হওয়া ও নিজের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা কর্তব্য। আর এর বাইরে যা কিছু মানুষ দ্বীনের নামে আবিষ্কার করেছে, তা বিদআত ও পরিত্যাজ্য।

এছাড়াও ‘জুমাতুল বিদা’কে কেন্দ্র করে অনেক ধরনের নব আবিষ্কার ও বিদআত ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। নানা কাল্পনিক ফজিলতের কথাও আমাদের সমাজে প্রচার পেয়েছে। স্থান-কালের ব্যবধানে এসবের ক্ষেত্রে নানা মাত্রিকতাও এসেছে। তন্মধ্যে কিছু বিদআতের কথা উল্লেখ করা হলো- যাতে সচেতন মুমিন এসব থেকে বেঁচে থাকতে পারেন।

এক.
রমজানের শেষ জুমায় বিভিন্ন মতাদর্শী, সাধারণ মানুষ ও বিদআতপন্থী লোকজন কিছু নামাজ পড়ে থাকেন; আর তারা মনে করেন, এভাবে নামাজ পড়লে ফরজ নামাজ ছুটে যাওয়ার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। অথচ শরিয়তে এমন নামাজের কোনো ভিত্তিই নেই। নিরেট বানানো বিদআতই কেবল এটা।

দুই.
উপমহাদেশের অনেক মুসলিম মনে করেন, পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ ও আলাপ-আলোচনার জন্য জুমাতুল বিদা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে এই উপলক্ষে তারা বড় বড় ও বিখ্যাত মসজিদগুলোতে সফল করেন। বিপুল সংখ্যকভাবে অংশ নেন।

বলাবাহুল্য যে, এই ধরনের জুমার কোনো বিশেষ ফজিলত নেই। তবে কেউ যদি এমনটা মনে করে থাকেন এবং বিশ্বাস করেন, তাহলে তিনি ভুলের ভেতরে রয়েছেন। অথচ ওয়াজিব ও কর্তব্য হলো- যখন জুমার ও ফরজ নামাজের আজান হবে, মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাতে শরিক হওয়া। আর অপারগ ব্যক্তি ছাড়া এক্ষেত্রে অবহেলা না করা।

তিন.
আবার কেউ কেউ এই দিন ‘সালাতুল ফায়েদা’ নামে নামাজের একটি পরিভাষা তৈরি করেছেন। অথচ এটা কোনোভাবেই শরিয়ত সিদ্ধ নয়। বরং মানুষের সৃষ্ট একটি বিদআত।

শায়খ ইবনুল উসাইমিনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সালাতুল ফায়েদা নামে একশ রাকাত ও রমজানের শেষ জুমায় চার রাকাত বিশেষ নামাজ রয়েছে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন? এই বক্তব্য কি সঠিক? আর এই নামাজের হুকুম কী?

তিনি উত্তরে বলেন, এই বক্তব্যটি সঠিক নয়। আর সালাতুল ফায়েদা নামে কোনো নামাজের ভিত্তিও নেই। কারণ, সব নামাজই তো ফায়েদার। আর ফরজ নামাজ হলো- সবচেয়ে ফায়দার; কেননা, কোনো ইবাদত যদি ফরজ হয়, সেটা নিশ্চয় নফল থেকে উত্তম।

অতএব, সালাতুল ফায়েদা নামে যে নামাজের কথা বলা হচ্ছে, এটা একটা বিদআত; শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।

মানুষের মাঝে প্রচার পাওয়া ও প্রচলিত প্রথামূলক ইবাদত-জিকির ও নামাজ থেকে বিরত থাকা খুব জরুরি — কোরআন-সুন্নাহতে যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আর জেনে রাখা দরকার যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও বেঁচে থাকা মৌলিক। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআনে ও রাসুল (সা.) হাদিসে যা সাব্যস্ত করেননি, শরিয়ত বহির্ভূত এমন কোনো ইবাদত জায়েজ নেই।

আর কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি যদি সন্দেহে আক্রান্ত হয় — করবে নাকি করবে না; সে ক্ষেত্রে সঠিক হলো- ইবাদতবিষয়ক শরিয়তের কোনো দলিল-প্রমাণ না থাকলে, সেটি ইবাদত হিসেবে ধর্তব্য হবে না। (মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইলুল উসাইমিন, খণ্ড : ১৪, পৃষ্ঠা : ৩৩১)

চার.
জুমায়ে ইয়াতিম নামে কেউ কেউ অনুষ্ঠান করে থাকেন। অথচ উপরোক্তগুলোর মতো এটারও শরিয়তে কোনো ভিত্তি নেই। রমজানের অন্য কোনো দিনগুলোর তুলনায় শেষ রমজানের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। এটার সঙ্গে মানুষ সুস্থ হওয়ার কোনো বিষয়ও সম্পৃক্ত নয়, যেমনটা কিছু লোক মনে করে থাকে। অনুরূপভাবে ইবাদতের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য ও বিশেষতা নেই। (আল-বিদাউল হাওলিয়্যাহ, পৃষ্ঠা : ৩৩৬)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =

Back to top button