করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারা দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন চলাচল। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় কোরবানির ঈদের আগে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া বা শিথিল করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এ অবস্থায় ঈদে ঘরমুখো মানুষদের বাড়ি যেতে সুবিধা হবে- এমন বিবেচনায় বিধিনিষেধের মধ্যেই গণপরিবহন চালুর দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এখন একটাই চাওয়া, ঈদের আগে চালু করা হোক দূরপাল্লার বাস চলাচল। তারা বলছেন, সড়ক পরিবহন খাতের ৫০ লাখ শ্রমিক এই মুহূর্তে বেকার। এ অবস্থায় তাদের জীবিকা নির্বাহ এবং সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের বাড়ি যাওয়ার ভোগান্তি কমাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চালুর অনুমতি দেওয়া হোক।
সড়ক পরিবহন খাতের নেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করা, বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস চালুর বিষয়ে ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রস্তাবও দিয়েছেন।
ঈদুল ফিতরে মানুষের বাড়ি ফেরা ঠেকাতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কিছুই কার্যকর হয়নি। বরং যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবে বাড়ি ফিরেছিলেন ওই ঈদে। ঈদের পর থেকেই দেশে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পরিবহন শ্রমিক আছেন ৭০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২০ লাখ জরুরি পণ্য পরিবহনের কাজে জ[ড়িত আছেন। বাকি ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার রয়েছেন।
আমরা তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি- স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত দূরপাল্লার পরিবহন চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ, ঈদুল আজহায় মানুষ বাড়ি যাবে বিকল্প বাহনে। ট্রাকে, পিকআপে, মোটর সাইকেলে, মাইক্রোবাসে। বেশি অর্থ খরচ করে মানুষ বাড়ি ফিরবে। তার চেয়ে দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাস স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানোর ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার।
ওসমান আলী বলেন, গাড়ি চললে পরিবহন শ্রমিকদের সংসার চলে। উপার্জনের পথ বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকছেন। এ যন্ত্রণা তাদের কাছে করোনা সংক্রমণের ভয়ের চেয়েও বেশিকিছু।
তিনি জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে শ্রমিকদের সহায়তা করা হচ্ছে। এছাড়া ঈদুল আজহা সামনে রেখে তাদের চাল, চিনি, সেমাই ও গরুর মাংস দেওয়া হবে। আগামী ১৬ জুলাই থেকে এই সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।
ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু রাখার পক্ষে মত তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদেরও। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাস চালুর পক্ষে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। জুনের শেষ সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তারা এ মতামত প্রকাশ করেছিলেন।
ঈদের ছুটিতে মানুষের মধ্যে নিজ গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। তাই মানুষের নিরাপদে যাতায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ
নিট গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি সেলিম ওসমান ওই সভায় বলেন, ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ যেন সুন্দরভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সে লক্ষ্যে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালু রাখা প্রয়োজন।
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মানুষের ঘরে ফেরা ঠেকাতে না পারার প্রসঙ্গটিও উঠে আসে সভায়।
ওই সভায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনার কারণে গত ঈদুল ফিতরের সময় তিন দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল। যাতে ঢাকা থেকে মানুষ গ্রামমুখী না হয়। সেজন্য সড়ক ও মহাসড়কে বাধা দেওয়া হলেও ঈদের ছুটিতে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। তাই মানুষের নিরাপদে যাতায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান ওই সভায় বলেন, ঈদের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহনে গাদাগাদি করে, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলাচল করেন তারা।
গত ৪ জুলাই দেশে করোনায় মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়ায়। এরপর মাত্র পাঁচ দিনে মৃতের সংখ্যায় যোগ হয় আরও ১ হাজার জন।
তিনি বলেন, শিল্প কারখানার শ্রমিকদের এক সঙ্গে ছুটি দেওয়া হলে মহাসড়কে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চলাচল করবে, যানজট বাড়বে। তৈরি পোশাক ও বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম ওই সভায় ঈদের সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে মানুষ গাদাগাদি করে যাতায়াত করবে এবং এতে সংক্রমণের হার বেশি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস ও ট্রেন যোগাযোগ সচল রাখলে সংক্রমণ কম হতে পারে।
দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরবর্তীতে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। এই বিধিনিষেধে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।