যেভাবে একটা ওয়েবসাইট হতে পারে জীবনভর আয়ের উৎস
আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর সাথে জড়িত তারা সবাই কম-বেশি গুগল অ্যাডসেন্স সম্পর্কে জানি। পৃথিবীর বহু দেশের মত আমাদের দেশের অনেক ব্লগাররাও গুগল অ্যাডসেন্স থেকে প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ টাকা উপার্জন করে থাকেন। অনেকে তাদের নিজস্ব ব্লগকে গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে মনিটাইজ করে টাকা উপার্জন করেন আবার অনেকে তাদের ইউটিউব চ্যানেলকে গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে মনিটাইজ করে টাকা উপার্জন করেন। আমার দেখা অনেকেই আছেন যারা ফাইভার, আপওয়ার্কসহ অনেক মার্কেটপ্লেসে ১/২ বছর চেস্টা করেও কাজ পাননি কিন্তু তারা এখন গুগল এ্যাডসেন্স করে ভালো মানের উপার্জন করছেন। গুগল এডসেন্স এমন একটি আয়ের মাধ্যম যেটি দিয়ে শুধু আপনি নিজে আয় করার পাশাপাশি একটি অফিস নিয়ে ১০/১২ জন লোক নিয়োগ দিয়ে একটি কোম্পানীও চালাতে পারেন। এই রকম অনেক প্রমান রয়েছে। যেমন wikihow.com তারা প্রায় ১০০ জনেরও বেশী কর্মচারী চালায় শুধুমাত্র গুগল এডসেন্স এর আয় দিয়ে।
আমাদের দেশে নতুন অনেকেই, বিশেষ করে ব্লগাররা গুগল অ্যাডসেন্স থেকে টাকা উপার্জন করতে চান কিন্তু সঠিক গাইডলাইন এর অভাবে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে টাকা আয় করতে পারেন না। অনেকেই আছেন গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্টও এপ্রুভ করাতে পারেন না। তো আমার আজকের লেখা তাদের জন্য এবং যারা অলরেডি একাউন্ট একটিভ করতে পেরেছেন তারাও এই পোষ্টটা দেখতে পারেন কিভাবে আপনার গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট সুরক্ষিত রাখবেন এবং ভালো পরিমান আয় করতে পারবেন।
আজকের এই আর্টিকেলে যা যা থাকছে
=> গুগল অ্যাডসেন্স কি?
=> কিভাবে গুগল অ্যাডসেন্স কাজ করে?
=> গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আপনি কি পরিমাণ আয় করতে পারবনে?
=> গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করার জন্য কিভাবে একটা ব্লগ তৈরী করবেন?
=> কি করে গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট এর অনুমোদন পাবেন?
=> কেন আপনি অ্যাডসেন্স থেকে ভালো পরিমান আয় করতে পারছেন না?
=> কোন টপিকের উপর গুগল বেশী ইনকাম প্রদান করে?
১. গুগল এ্যাডসেন্স কি?
গুগল অ্যাডসেন্স হচ্ছে অত্যান্ত কার্যকরী ও বিশ্বের বৃহত্তম একটি অনলাইন অ্যাডভার্টাইজিং নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে বিশ্বের বড়-বড় ব্লগার ও ওয়েবমাষ্টাররা তাদের ব্লগ/ওয়েবসাইট মনিটাইজ করে টাকা আয় করে থাকেন। গুগল তাদের বার্ষিক আয়ের বড় একটি অংশ গুগল অ্যাডসেন্স থেকে করে থাকে।
২. কিভাবে গুগল অ্যাডসেন্স কাজ করে?
এইটা খুবই সহজ একটা পদ্ধতি। আপনাকে গুগল অ্যাডসেন্স এর পাবলিশার হতে হবে এবং আপনার ব্লগ/ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেলে অ্যাডসেন্স এর বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। কেউ যদি সেই বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করে তাহলে আপনে প্রতি ক্লিকের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পাবেন। এছাড়া শুধু মাত্র আপনার ব্লগ/সাইটের বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্যও আপনি অল্পকিছু পরিমান টাকা পাবেন। আর এই বিজ্ঞাপনগুলো গুগল তাদের আরেকটি প্রোগ্রাম গুগল অ্যাডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকে।
৩. গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আপনি কি পরিমাণ আয় করতে পারবনে?
এইটা আসলে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না যে আপনি অ্যাডসেন্স থেকে কত টাকা আয় করতে পারবেন। এটা কয়েকটা জিনিসের উপরে নির্ভর করবে যেমনঃ আপনার ব্লগের টপিক কি? ব্লগে প্রতিদিন ইউনিক ভিজিটর কেমন? পেজভিউ কত? ভিজিটর কোন দেশের? এডস্লট ব্লগের কোথায় বসানো হয়েছে? টেক্সট এড নাকি ইমেজ এড? সিটিআর (ক্লিক থ্রো রেশিও) কত? আপনার টার্গেটেড কীওয়ার্ডের সিপিসি (কষ্ট পার ক্লিক) কত? ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে সাধারনত, আ1পনি প্রতি ক্লিকের জন্য ১ সেন্ট থেকে ২০ ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন আর প্রতি থাউজেন্ড ইম্প্রেশনের জন্য ১ থেকে ৫ ডলার বা তারও বেশি পেতে পারেন।
৪. গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করার জন্য কিভাবে একটা ব্লগ তৈরী করবেন?
আসলে একটা ব্লগ করার জন্য অনেকগুলো প্রসেস, অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলা লাগে আর সময় লাগে। আমি এইখানে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করবো কিভাবে গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট অনুমোদন পাওয়ার জন্য এবং গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ভালো পরিমান আয় করার জন্য ব্লগ করবেন।
প্রথমে আপনাকে ব্লগের জন্য ভালো দেখে একটা টপিক পছন্দ করতে হবে যেটা সম্পর্কে আপনি মোটামুটি জানেন এবং লিখতে পারবেন। টপিকটা/কীওয়ার্ডটা এমন হতে হবে যাতে এর সিপিসি বেশী হয়। একটা কীওয়ার্ডের সিপিসি দেখার জন্য আপনি গুগল অ্যাডওয়ার্ড কীওয়ার্ড প্ল্যানার টুল ব্যবহার করতে পারেন এবং এটি ফ্রি।
আপনাকে মনে রাখতে হবে যে অ্যাডসেন্স থেকে বেশি আয় করার জন্য আপনার ব্লগে অনেক ভিজিটর লাগবে আর ভিজিটর পেতে হলে ব্লগে অনেক কন্টেন্ট থাকা লাগবে এবং কন্টেন্ট ভালো মানের হতে হবে। কারন ভিজিটর যদি আপনার কন্টেন্ট পঁছন্দ করে তাহলে বার বার আপনার ওয়েবসাইটে আসবে তার বেশী ভালো লাগলে আপনার ওয়েবসাইট শেয়ার করবে। সুতরাং চেষ্টা করবেন এমন টপিক পছন্দ করতে যেটার সিপিসি ও বেশী আবার আপনি ঐ টপিক সম্পর্কে ভালো লিখতে পারবেন। ভালো মানের আর্টিকেল লেখার জন্য গুগলে প্রচুর পরিমানে চার্স দিন একটু পড়াশুনা করতে হবে। আসলে কোন ইনকামই কষ্ট করা ছাড়া হয় না।
আজকাল দেখা যায় যে অনেক নতুন ব্লগাররা সিপিসি বেশি পাওয়ার জন্য এমনসব টপিক পছন্দ করেন যে তারা ঐ টপিকগুলা সম্পর্কে ভালো জানেন না, যার কারণে তারা মানস্মত ও বেশি কন্টেন্ট লিখতে পারেন না এবং অ্যাডসেন্স থেকে ভালো আয়ও করতে পারেন না।
টপিক পছন্দ করার পরে টপিক অনুযায়ী ব্লগের জন্য একটা ডোমেইন নাম পছন্দ করতে হবে এবং কিনতে হবে। গোড্যাডি বা নেমচিপ থেকে ডোমেইন কিনতে পারেন। ব্লগ হোষ্ট করার জন্য আপনাকে হোস্টিং কিনতে হবে। হোস্টিং আপনি হোস্টগ্যাটর, এটুহোস্টিং বা মাষ্টারটেক থেকে কিনতে পারেন। আমি নতুনদের জন্য ২জিবি হোস্টিং + ১টি ডোমেইন + এসইও এবং গুগল এ্যাডসেন্স ফ্রেন্ডলি ১টা ভালো মানের ওয়েবসাইট করে দেই মাত্র ৩০০০ টাকায় যেটার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য আছে ১০/১২ হাজার টাকা। আমি কেন এত কমে করে দিচ্ছি? আসলে আমার অভিজ্ঞতায় বলে যে যারা নতুন অনলাইনে আয়ের জগতে আসে তারা অনেকেই আর্থিক সমস্যায় ভোগে তাই তারা যেন নিরাশ না হয় বা ভেংগে না পড়ে তাই তাদেরকে সহযোগীতা করা। যেহেতু আমি ওয়েব ডেভেলপার তাই আমি শুধু মাত্র ডোমেইন হোস্টিং বাবৎ ৩০০০ টাকা নিয়ে ওয়েবসাইট করে দেই। অর্থাৎ আমার ওয়েবসাইট করার খরচ নেই না। অর্ডার দিতে ক্লিক করে এই পেজে মেসেজ দিন ।
এইবার আপনাকে ব্লগ তৈরী করতে হবে এবং ব্লগ করার জন্য অধিকাংশ ব্লগাররাই ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস কে ব্যবহার করে থাকে। আপনি কোন কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানা ছাড়াই ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে একটি ব্লগ বানাতে পারেন। এরপর আপনার ব্লগের জন্য একটা প্রিমিয়াম থিম ও কিছু প্লাগিন কিনতে হবে যা আপনি থিমফরেষ্ট, ইলিগেন্টথিমস থেকে কিনতে পারেন। তবে শুরুতেই ইনভেস্ট না করে আমাদের ফ্রি সার্ভিস নিতে পারেন ।
৫. কি করে গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট এর অনুমোদন পাবেন?
এখন আপনার ব্লগ তৈরী হয়ে গেলো এবং আপনি হয়ত অ্যাডসেন্স একাউন্ট পাওয়ার জন্য তৈরী। কিন্তু আপনি অ্যাডসেন্স একাউন্টের জন্য আবেদন করার আগে নিন্মোক্ত দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে অন্যথায় আপনার একাউন্ট অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তো চলুন দেখে নেওয়া যাক অ্যাডসেন্স একাউন্টের অনুমোদন পেতে হলে আপনাকে কি কি জিনিস বিবেচনা করা লাগবে।
আপনার ব্লগের অবশ্যই একটি কাষ্টম ডোমেইন নেম থাকতে হবে যেমন pastearticle.com অনেকেই দেখা যায় যে ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেসে একটা ব্লগ করে বা একটা ফ্রি ডোমেইন নিয়ে ফ্রী হোস্টিং এ হোস্ট করে অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করেন, এক্ষেত্রে আপনার অ্যাডসেন্স একাউন্ট অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%।
ডোমেইন বয়স অবশ্যই ৩ থেকে ৪ মাস হওয়া ভালো
ব্লগের ডিজাইন এবং নেভিগেশন যাতে ইউজার ফ্রেন্ডলী হয়
ব্লগের জন্য এবাউট, কন্টাক্ট, প্রাইভেসি পলিসি/ডিসক্লেইমার পেজ তৈরী করুন
কমপক্ষে ৩০-৪০ টাকন্টেন্ট পাবলিশ করুন যার মধ্যে ৫-১০ কন্টেন্ট ১৫০০ ওয়ার্ড এর বেশী এবং বাকীগুলো ৭০০ ওয়ার্ডের বেশি।
কোনরকম কপি/পেষ্ট কন্টেন্ট পাবলিশ করা যাবে না
ব্লগের জন্য কিছু এস.ই.ও. এর কাজ করুন এবং প্রতিদিন যাতে কিছু সার্চ ট্রাফিক আসে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করুন
যদি অন্য কোন এড নেটওয়ার্ক এর এড ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেগুলো মুছে দিনে
এ্যাডসেন্সে আবেদনের পূর্বে যেই বিষগুলো অবশ্যই জানতে হবে সেগুলো পড়তে ক্লিক করুন এখানে
৬. কিভাবে গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্টের জন্য আবেদন করবেন?
যখন আপনার ব্লগ তৈরী হবে এবং উপরোক্ত শর্তগুলোর সাথে মিলে যাবে তখন আপনি গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্টের জন্য আবেদন আপনাকে প্রথমে এই ঠিকানায় যেতে হবে এবং “গেট স্টার্টেড নাউ” বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এখন আপনি যদি আপনার আগের কোন জিমেইল একাউন্ট দিয়ে সাইন-আপ করতে চান তাহলে “ইয়েস, প্রোসিড মি টু গুগল একাউন্ট সাইন-ইন” বাটনে ক্লিক করতে হবে। আর আপনি যদি নতুন একটা জিমেইল আইডি দিয়ে সাইন-আপ করতে চান তাহলে “নো, ক্রিয়েট এ নিউ গুগল একাউন্ট” বাটনে ক্লিক করতে হবে।