এপ্রিলে বেতনের ৬০ ভাগ পাবে পোশাক শ্রমিকরা
করোনাভাইরাসের প্রভাবে এপ্রিল মাসে পোশাক খাতের লে-অফ বা বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকরা মোট বেতনের ৬০ ভাগ পাবেন। আর যে সব কারখানায় কিছুদিন কাজ হয়েছে, সে সব কারখানার শ্রমিকরা ওই কর্মদিবসগুলোর পুরো অর্থ পাবেন। একই সঙ্গে ঈদের আগে নতুন করে কোনো শ্রমিক নেয়া কিংবা ছাঁটাই করা হবে না।
বৈঠকে পোশাক শিল্পের মালিকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সংসদ সদস্য ও সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সংসদ সদস্য ও বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান ও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ।
অন্যদিকে শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান,জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, শ্রমিক নেতা ডা. ওয়াজেদ প্রমুখ।
সূত্র জানায়, বৈঠকে মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব শ্রমিকই আগে-পরে বেতন পাবেন। এপ্রিল মাসে লে-অফ ও বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকদের মোট বেতন ৬০ ভাগ দেয়া হবে। আর এপ্রিল মাসে যে সব কারখানা যে কয়েকদিন চালু ছিল সে ক’দিনের শতভাগ বেতন তারা পাবেন। মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোর ৬০ ভাগ বেতনও তাদের দেয়া হবে।
এ সময় শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অন্যায়-অযাচিতভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে ঈদের আগ পর্যন্ত আর ছাঁটাই হবে না বলে মালিক প্রতিনিধিরা অঙ্গীকার করেন।
সূত্র আরও জানায়, দ্রুততার সঙ্গে এপ্রিল মাসের বেতন শ্রমিকদের দেয়া হবে বলে সভা থেকে নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া আগামী মে মাসের বেতন পরিশোধ পদ্ধতি নিয়ে মাসের শুরুতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই সভায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বুধবার (আজ) শ্রম প্রতিমন্ত্রী এ সেক্টরের অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে মালিকদের পক্ষ থেকে এপ্রিল মাসে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে দুটি প্রস্তাব এসেছে। প্রথমত, সাধারণ ছুটিতে যেসব শ্রমিক গ্রামে আছে এবং যেসব কারখানা বন্ধ বা লে-অফ করা হয়েছে সেসব কারখানা শ্রমিকদের ৬০ ভাগ বেতন দেবে। দ্বিতীয়ত, এপ্রিলে যে ক’দিন কাজ হয়েছে তার পূর্ণ বেতন দেবে। তবে এসব প্রস্তাব নিয়ে পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বুধবার অন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, শুধু ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়েই পোশাক কারখানা চালু করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার বাইরে থেকে কোনো শ্রমিক আসতে পারবেন না। বৈঠকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তারা (পোশাক কারখানার মালিকরা) প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওয়াদা করেছেন যে, জনস্বার্থে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কারখানা চালু করবেন। করোনাভাইরাসে যেন আরও অনেকে আক্রান্ত না হন, তাই (ঢাকার) বাইরে থেকে কোনো শ্রমিক আনবেন না। ঢাকায় যেসব শ্রমিক অবস্থান করছেন তাদের দিয়েই তারা কারখানা চালু করবেন। সেভাবেই তারা কারখানা খুলছেন। কারখানা মালিকরা বলেছেন, তাদের ওপর সরকারি যে বিধিনিষেধ রয়েছে, সে হিসেবে গত মার্চ মাসের বেতন পুরোটাই তারা দিয়ে দেবেন। তারা প্রায় ৯৭ শতাংশ বা এর বেশি বেতন দিয়ে দিয়েছেন বলেও আমাদের জানিয়েছেন। এপ্রিল মাসের বেতন সরকার যেভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সে অনুযায়ী দেবেন। তারা এটি আমাকে নিশ্চিত করে গেছেন, যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা কীভাবে (কারখানায়) আসবেন, কীভাবে যাবেন, কীভাবে থাকবেন- সেগুলো নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তারা যে পরীক্ষাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেগুলো ত্বরান্বিত করতে বলেছি আমরা। শ্রমিকরা যদি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে তাদের সুরক্ষার জন্য তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেটাও আমরা শুনেছি। বিদেশের অর্ডার রয়েছে বলে কিছু কারখানা খোলা দরকার মনে করছেন মালিকরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে কারখানা চালু করেছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।