Lead Newsজাতীয়

ঐতিহ্যবাহী মসলিন দেখাচ্ছে আশার আলো

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ গ্রহণ করে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র তিন কোটি ৯২ লাখ টাকা।

প্রকল্পের অধীনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কমিশন থেকে শিগগিরই এর অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আয়ুব আলী গণমাধ্যমকে বলেন, “ঢাকাই মসলিন হাউস নির্মাণের জন্য আমরা প্রকল্পটি সংশোধন করতে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। এটি একনেক পর্যন্ত যাবে না, কারণ প্রকল্পের টাকা বাড়েনি। আশা করছি শিগগিরই অনুমোদন মিলবে।”

প্রাচীন ও মধ্য যুগে বিশ্বের ধনী ও অভিজাত শ্রেণির মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছিল এ মসলিন কাপড়। ১৭৪৭ সালে মাত্র এক বছরে ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার মসলিন কাপড় রফতানি হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকাই মসলিনের উৎপাদন।

তিনি বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে বিজিএমসির একটি বন্ধ কারখানা আমাদের দেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গা আছে। জায়গাটি ঢাকাই মসলিন হাউস নির্মাণের জন্য উপযুক্ত।

কবে নাগাদ ঢাকাই মসলিন হাউসের উদ্বোধন হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করছি সেপ্টেম্বর মাসেই উদ্বোধন করতে পারব। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এটি উদ্বোধন এখানে ৫০০ নারীর কর্মসংস্থান হবে বলেও জানান তিনি।

গবেষকদের মতে, প্রায় ১৭০ বছর আগে ২৫০ কাউন্টের (২৫০ মিটার সুতার ওজন হবে ১ গ্রাম) চেয়ে মিহি সাদা সুতা দিয়ে তৈরি হতো মসলিন কাপড়। সুতা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো ফুটি কার্পাস। মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরসংলগ্ন অঞ্চলে হতো ফুটি কার্পাসের চাষ।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের গবেষকদল ইতোমধ্যে মসলিনের ১৯টি কাপড় তৈরি করেছে। তাদের দাবি, উৎপাদিত কাপড়গুলোর সঙ্গে ইংল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়াম ও বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত মসলিনের মিল রয়েছে

২০১৪ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় মসলিন সুতা তৈরি হতো, তা জেনে সেই প্রযুক্তি উদ্ধারেরও নির্দেশ দেন তিনি।

বোর্ডের দাবি, অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে মসলিনের কাঁচামাল ফুটি কার্পাস খুঁজে বের করা, ফুটি কার্পাসের চাষাবাদ, সুতা উৎপাদন, কারিগরদের দক্ষতা উন্নয়ন করে উন্নতমানের মসলিন উৎপাদন করা সম্ভব।

জানা গেছে, ঢাকাই মসলিন হাউসে প্রতি বছর ৬০টি মসলিন কাপড় তৈরি হবে। একেকটির উৎপাদন ব্যয় হবে দুই থেকে তিন লাখ টাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাপড়গুলো বিদেশে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রকল্প পরিচালক আয়ুব আলী বলেন, ‘ডিজাইনসহ একটি মসলিন শাড়ি তৈরি করতে উৎপাদন খরচ পড়বে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। এত ব্যয় দিয়ে শাড়ি তৈরি করলে হয়তো সাত লাখ টাকায় বিক্রি করতে হবে। সে কারণে আমরা ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি উৎপাদন বাড়িয়ে খরচ কমানোর জন্য। এক্ষেত্রে ঢাকাই মসলিন হাউসে উৎপাদন খরচ পড়বে দুই থেকে তিন লাখ টাকা। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে এ কাপড়ের ব্র্যান্ডিং করবে। দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন হাই কমিশনের মাধ্যমে এ কাপড় বিক্রি করা হবে।’

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিকভাবে সরকারি উদ্যোগে ঢাকাই মসলিন উৎপাদন ও বিক্রি করে সফলতা আনতে চান তারা। এরপর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানানো হবে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকাই মসলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদনের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া এটি রফতানি করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।

তিনি আরও বলেন, অচিরেই বাংলাদেশের অন্যতম ব্র্যান্ডিং হবে ঢাকাই মসলিন। ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − fifteen =

Back to top button