ধর্ম ও জীবন

কথা ও কাজে ইনশাআল্লাহ বলার ফজিলত

বাক্যটি তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত। ‘ইন’ অর্থ: যদি, ‘শা’ অর্থ: ইচ্ছা করেন, ‘আল্লাহ’ অর্থ: আল্লাহ অর্থাৎ: যদি আল্লাহ চান। আরবি ব্যাকরণে বাক্যটি শর্তবাচব বাক্য। যার পরে বক্তার ইচ্ছাকৃত কাজটি উহ্য আছে। যেমন: কোনো ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছা করে বলল, ‘ইনশা আল্লাহ’ অর্থাৎ যদি আল্লাহ চান তবে আমি হজ করবো। পবিত্র কোরআনে এসেছে, وَإِنَّا إِن شَاء اللَّهُ لَمُهْتَدُونَ

অর্থ: ‘ইনশা আল্লাহ (আল্লাহ চাহে তো) আমরা অবশ্যই সঠিক পথের দিশা পাব।’ (সূরা: বাকারাহ, আয়াত: ৭০)।

যেহেতু বান্দা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোনো কাজ করতে পারে না, তাই তার উচিত প্রতিটি কাজ সম্পাদনের সংকল্প করার পূর্বে إن شاء الله ‘ইনশা আল্লাহ’ বলা। ‘ইন শা আল্লাহ- إِن شَاء اللَّهُ’ ছোট্ট একটি আরবি বাক্য। ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এ বাক্য ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কেননা আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে যে কোনো কথা ও কাজে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ইন শা আল্লাহ’ বলে কথা ও কাজ শুরু করার কারণও আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে এভাবে আয়াত নাজিল করে তুলে ধরেছেন-

وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِي

‘তোমাদের কোনো ইচ্ছাই বাস্তবে রূপ নেবে না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন; যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।’ (সুরা আত-তাকভির : আয়াত ২৯)

ভবিষ্যতের কোনো কথা কিংবা কাজ করার আগে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলা— ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি রীতি। এ আয়াত থেকেই প্রমাণিত যে, এটি আল্লাহ তায়ালা নিজেই শিখিয়েছেন। অন্য আয়াতে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলে কথা ও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মুমিন তার জীবনের প্রতিটি কাজেই আল্লাহকে স্মরণ করবে। কারণ সে তার প্রতিটি কথা ও কাজে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করবে; নিজের শক্তি-সামর্থ্য কিংবা অন্যান্য কোনো উপায়-উপকরণের ওপর নয়।

তাইতো মুমিন মুসলমান ভবিষ্যতের কোনো কাজের কথা বলতে গিয়ে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলে থাকেন। কিন্তু এই ইন শা আল্লাহ কী? এর অর্থইবা কী? ‘ইন শা আল্লাহ’ শব্দের অর্থ হলো- যদি আল্লাহ তায়ালা চান। অর্থাৎ যদি আল্লাহ চান তাহলে আমি এই.. এই.. কাজ করব কিংবা এই.. এই.. কাজ হবে।ইসলামে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব।

কোরআনে ‘ইন শা আল্লাহ’র ব্যবহার
বাস্তব জীবনে ইন শা আল্লাহর ব্যবহার কেমন হবে, আল্লাহ তায়ালা নিজেই কোরআনে তা তুলে ধরেছেন এভাবে-

لَقَدْ صَدَقَ اللَّهُ رَسُولَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ إِن شَاء اللَّهُ آمِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُؤُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَ فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَلِكَ فَتْحًا قَرِيبًا

আল্লাহ তার রাসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যদি আল্লাহ চান; তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে। নিরাপদে মস্তকমুণ্ডিত অবস্থায় এবং চুল কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।’ (সুরা ফাতহ : আয়াত ২৭)

কোরআনে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলার নির্দেশ

আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ইন শা আল্লাহ বলার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ وَاذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَى أَن يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَذَا رَشَدًا

‘(হে রাসূল!) আপনি ‘ইন শা আল্লাহ’ বলা ব্যতিত কোনো জিনিসের ব্যাপারে কখনো একথা বলবেন না যে, আমি আগামীকাল এ কাজটি করবো৷ যদি ভুলে এমন কথা মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নিজের রবকে স্মরণ করুন এবং বলুন- আশা করা যায়, আমার রব এ ব্যাপারে সত্যের নিকটতর কথার দিকে আমাকে পথ দেখিয়ে দেবেন৷’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৩-২৪)

‘ইন শা আল্লাহ বলার গুরুত্ব ও ফজিলত
‘ইন শা আল্লাহ’ বলার মাধ্যমে বান্দার বিনয়, আকুতি এবং আল্লাহ তায়ালার উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল বা ভরসা প্রকাশ পায়। ভবিষ্যতের কোনো কাজের ইচ্ছা পোষণের ক্ষেত্রে, আল্লাহর নাম নেয়া থেকে বিরত থাকলে বান্দার ঔদ্ধত্য-অহংকার প্রকাশ পায়। যা তার কথা ও কাজকে বরকতহীন বানিয়ে দেয়।

তাই সব মুমিন মুসলমানের উচিত, ভবিষ্যতের যে কোনো কথা বলা ও কাজের করার ঘোষণা দেওয়ার আগে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলার আমলকে একান্ত অভ্যাসে পরিণত করা। নিজ নিজ পরিবারের শিশু-কিশোর; ছোট-বড় সব সদস্যদের এ কোরআনিক আদব ও নির্দেশকে অভ্যাসে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস ও অনুভূতির সঙ্গে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলার এবং এটাকে সব সময়ের জন্য অভ্যাসে পরিণত করে তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + eleven =

Back to top button