করোনা থেকে কীভাবে দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা?
চলমান করোনাযুদ্ধে জনগণের সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩ হাজার ৫৭৪ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের উন্নত ও মানসম্মত ‘চিকিৎসা ও সেবায়’ সুস্থতার হার দ্রুততার সাথে বাড়ছে। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হওয়া পুলিশের ৭২২ জন সদস্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের অনেকেই জনগণের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে আবারও কাজে যোগ দিয়েছেন।
সদ্য করোনা জয় করা পুলিশের এএসপি পর্যায়ের ৩ কর্মকর্তাসহ ৬ জন পুলিশ সদস্যসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় করোনা টেস্টের পজিটিভ হওয়া থেকে শুরু করে দ্বিতীয় নেগেটিভ টেস্ট পর্যন্ত কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাদের।
অধিকাংশ পুলিশ সদস্য বলেন, শারীরিক ভাবে কেউ-ই- খারাপ অবস্থা নিয়ে করোনা টেস্ট করেননি। তাদের ইউনিটের সঙ্গে সবাই মিলে করেছেন বা সামান্য গলা ব্যথা সন্দেহে টেস্ট করেছেন। আর তখনই টেস্ট পজিটিভ এসেছে।
করোনা টেস্ট পজিটিভ আসার পরই রাজধানীতে পুলিশের জন্য তৈরি ৮ টি আইসোলেশন সেন্টারের যে কোন একটিতে রাখা হয় তাদের। কারো শারীরিক অবস্থা খুব বেশি অবনতি না হলে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় না। এই আইসোলেশন সেন্টারের ডাক্তারদের সহযোগিতায় তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।
এই পুলিশের সদস্যরা জানান, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল ও আইসোলেশনে একই ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়। শারীরিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে শুধু হাসপাতালে নেয়া হয়। সবাইকে কমবেশি Renova, Panoral 20, Zimax 500, Reconil, Fexofast 120, Telukast 10, Xinc-B ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি পরামর্শ দেওয়া হয় লেবু, আদা, লং, এলাচি, দারুচিনি, রসুন ১ লিটার পানিতে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে পানির গরম বাষ্প ৫ মিনিট নাকে মুখে নিতে। এই কাজটি দিনে ৪ থেকে ৫ বার করতে বলেন।
আবার মুক্ত বাতাসে গিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া পাশাপাশি গরম পানি দিয়ে গলায় গড়গড়া করা, চাপাতা দিয়ে চা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দিনের মধ্যে কমপক্ষে দুই বার ব্যায়াম করানো হয়। এভাবে পরপর ৫ দিন সুস্থ বোধ করলে ৭/৮ দিনের দিন দ্বিতীয় টেস্টের জন্য পাঠানো হয়। দ্বিতীয় টেস্ট নেগেটিভ আসলে তৃতীয় টেস্টের জন্য পরবর্তী ৩ দিন পর পাঠানো হয়। সেটাও নেগেটিভ আসলে সুস্থ বলে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।
করোনাজয়ী এই পুলিশ সদস্যরা বলছেন, পুলিশ সদস্যরা গড়ে ১৫/১৭ দিন করে করোনা পজিটিভ হওয়ার পর চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ হচ্ছেন।
পুলিশের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, পুলিশ সদস্যদের যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে- এটিই প্রায় সব জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে। যেহেতু এটি একটি ভাইরাস, তার শক্ত আক্রমণ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে। নির্দিষ্ট সময় পর এটার আগের মত প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।
পুলিশ সদস্যদের মধ্যে করোনা সংক্রামণ ঝুঁকি কমার বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। একই সাথে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য সর্বোত্তম সেবা ও শুশ্রূষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করাসহ সকল পুলিশ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। এ কারণে একদিকে পুলিশ আক্রান্তের হার যেমন ক্রমান্বয়ে কমছে, তেমনি দ্রুততার সাথে বাড়ছে সুস্থতার হার।
সুত্রঃ বার্তা২৪.কম