করোনাভাইরাস দিয়ে আল্লাহ আমাদের কী শিক্ষা দিচ্ছেন
পৃথিবী এভাবে স্তব্ধ হয়ে যাবে কখনও কল্পনা করেছি? ঠিক এভাবেই একদিন আমার-আপনার জীবন ঘড়িটা থেমে যাবে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাব আমরা। ঘুম থেকে উঠে চিরচেনা যে ঘরে পায়চারি করতাম, সে ঘরও আমাকে আর চিনবে না।
যে কলম দিয়ে সাদা পৃষ্ঠায় অক্ষরের চাষাবাদ করতাম, সে কলম পড়ে থাকবে, আমি আর হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারব না। পরিবার-পরিজন কেঁদে-কেটে কয়েকদিন পর ভুলে যাবে। পৃথিবীতে মানুষের আসা-যাওয়া বড় একা।
অথচ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আর বিখ্যাত হওয়ার নির্লজ্জ লালসায় মানুষের মন সর্বক্ষণ ডুবে আছে। হাজারো চাহিদার লোভে মানুষ তার আসল ঠিকানা ভুলে গেছে। মানুষ সাময়িক সুখের এতটাই কাঙাল যে, চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা আখেরাতের কথা সে বেমালুম ভুলে গেছে।
মানুষ সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছে বেশি টাকা, ক্ষমতা, সম্মান, আলিশান বাড়ি, গাড়ি আর বিপরীত লিঙ্গের মাঝে। এতকিছুর পরও মানুষের মনে সুখ নেই। শান্তি নেই। কোথায় যেন এক অজানা শূন্যতা রয়েই যায়। বাড়ি-গাড়ি, টাকা-পয়সা, ক্ষমতা, সম্মান এগুলো কখনও কি বলেছে- আমার পিছে ঘোরো, আমি তোমাদের সুখী করব? না।
কোনোদিন তো বলেনি। কিন্তু আমরাই সেগুলোকে সুখের কারণ বানিয়ে নিয়েছি। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! প্রাচুর্যের মোহ তোমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। (সূরা তাকাসুর, আয়াত ১।)
বিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগি বলেছেন, ‘আপনি কে বা কী, আপনার কী আছে এসবের ওপর আপনার সুখ নির্ভর করে না। বরং আপনার সুখ নির্ভর করে আপনি নিজের ভেতর কেমন মানসিকতা লালন করেন তার ওপর।’ জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে দুটি দুঃখ আছে। একটি হল তাদের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকা। অন্যটি হল কোনো ইচ্ছা পূরণ হওয়া মাত্র আরেকটি নতুন ইচ্ছা তৈরি হওয়া।’
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত নাজুক। বিজ্ঞানীরা বারবার এ কথা বলে আসছেন। ভবিষ্যতে মানবপ্রজন্ম পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে- সে শঙ্কাও বিজ্ঞানীরা খুব জোর দিয়েই বলেছেন। একটি দিন যাচ্ছে আর আমাদের হিসাবের সময় এগিয়ে আসছে।
অথচ একবারো কি ভেবেছি মহান প্রভুর আদালতে দাঁড়িয়ে কী জবাব দেব আমরা? যখন আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে, প্রশ্ন করা হবে প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে- তখন কী বলব? আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সেদিন প্রতিটি নেয়ামত সম্পর্কে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে।’ (সূরা তাকাসুর, আয়াত ৮।)
হায়! সে দিন কেউ কারও উপকারে আসবে না। হাজার হাজার ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বন্ধু, ফলোয়ার, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী কেউই সেদিন কারও কোনো উপকার করতে পারবে না। সে ভয়াবহ দিনে একাই আমাকে আমার প্রভুর সামনে দাঁড়াতে হবে।
আমার কথা, চিন্তা, আচরণ, লেখা, কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে সেদিন বিচার হবে। ফলাফল ভালো হলে জান্নাতে যাব, নয়তো লেলিহান জ্বলন্ত আগুনে আমার ঠিকানা হবে। আমার যন্ত্রণা দেখে কেউ এগিয়ে আসবে না।
করোনা মহামারীর সময়েও আমরা চুরি-দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলাম না। দরিদ্র জনগণের অধিকার খেয়ে ফেলতে বুক কেঁপে উঠল না। কোটি টাকার মালিক হয়েও ভুখা মানুষের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিলাম না। আমাদের মন-মানসিকতা দেখে মনে হচ্ছে, এ পৃথিবীতে আমরা কেবল নিতেই এসেছি, কিছু দিতে আসিনি।
আমাদের সীমালঙ্ঘনে আল্লাহ কতটা অভিমান করেছেন, তা বর্তমান পরিস্থিতিই চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে। যারা জ্ঞানী, চিন্তাশীল কেবল তারাই এর ভয়াবহতা অনুভব করতে পারছেন। আমরা সজাগ হব, অনুশোচনা করব, ফিরে আসব আল্লাহর দিকে- এ রকম কিছুই তো দেখছি না।
এ দেশে ধর্মের অপব্যবহারই বেশি হয়। কী হবে নিজেকে মুখে মুখে মুসলমান দাবি করে এমন নোংরা যদি হয় আমাদের কর্মকাণ্ড। আমাদের ওপর শাস্তি আসবে না কেন? এ রকম নামধারী মুসলমানের কোনো মূল্য নেই আল্লাহর কাছে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কতটুকু মানুষ হতে পেরেছি!
লেখক : জামাল আস-সাবেত, লেকচারার ও কলামিস্ট
Email : jamalassabet@gmail.com
সূত্রঃ যুগান্তর