করোনায় থেমে নেই বিয়ের অনুষ্ঠান
করনাভাইরাসের কারনে মানুষের জীবন, জীবিকা এবং জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করতে পারেনি।
মহামারির শুরুর দিকে বিয়ের আয়োজন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত একে আর ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। বিয়ে বলে কথা, তাই যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও অনুষ্ঠান করতেই হবে ।
গত ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ দৃশ্যত লকডাউনে চলে যায়। সেই থেকে মানুষজনকে গৃহবন্দী হয়ে পড়তে হয়, যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘরোয়া সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে থাকে।
লকডাউনের প্রথম দিকে দেশে সামাজিক অস্থিরতার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখা গেলেও বছরের মাঝামাঝি থেকে বিয়ের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে।
ঊনত্রিশ বছর বয়সী ব্যবসায়ী ইমরান জায়েদ (আসল নাম নয়) এবং ছাব্বিশ বছর বয়সী আলভিরা (আসল নাম নয়) মার্চে বিয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ‘লকডাউনের’ কারণে তাদের বিয়ে স্থগিত করতে হয়েছিল।
এরপরে এ দম্পতি শেষ পর্যন্ত আগস্টে তাদের ‘আকদ’ শেষ করেন এবং ডিসেম্বরে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের আশা সেই সময় পরিস্থিতি আরও ভালো হবে এবং অনুষ্ঠানে আগত অতিথির সংখ্যাও বাড়বে।
অন্য এক দম্পতী, জেসমিন মৌ এবং নাহিয়ান সম্প্রতি (আসল নাম নয়) বিয়ে করেন। ইমরান ও আলভিরার মতো নয়, এ দম্পতি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিয়ের আগের অনুষ্ঠানগুলো পরিপূর্ণভাবে তাদের বাড়িতে আয়োজন করেন এবং পরে ‘আকদ’ ও রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে বিপুল সংখ্যক অতিথি ও আত্মীয়কে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা শেষ করেছেন।
কিন্তু মহামারি চলাকালীন কেন তারা বিয়ে করলেন? সে বিষয়ে তাদের পরিচিত কয়েকজন চমৎকার কিছু তথ্য জানিয়েছেন।
‘এখন বিয়ে করা দম্পতিদের বেশির ভাগই তাদের চাকরি বা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তাই, তারা বিয়ের পরে একে অপরকে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। অনেকে আবার বাড়ি থেকে দূরে কাজ করেন। তাই এখন ঘরে বেশি সময় কাটানোর যে সুযোগটি রয়েছে তা কাজে লাগাতে আমাদের অনেকেই বিয়ে করতে চাচ্ছেন’, বলছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করা নবীন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বাবু ।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘বিয়ে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অঙ্গ, যা এ চলমান মহামারিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক মাস ধরে লকডাউন থাকার পরে উৎসবগুলো ধীরে ধীরে সমাজে ‘নিউ নরমাল’ হিসেবে আবার শুরু হচ্ছে।’
বিয়ের নতুন ধারা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ড. সাদেকা বলেন, ‘বয়স্ক ব্যক্তিরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পারিবারিক সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করেন। তাদের করোনাভাইরাসের ঝুঁকি ও মৃত্যুর হার বেশি। তাই লকডাউন তুলে নেয়ার পর তারা তরুণ প্রজন্মকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করতে জোর দিচ্ছেন।’
‘আমার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ে করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বলছে মহামারিটি বিয়ে সম্পর্কে তাদের ধারণার ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং তারা এখন তাদের ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে নতুন ধারণাতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছে,’ বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ের অনুষ্ঠান করা উচিত।