Lead Newsসরকার

কাগজের দাম কমায় পাঠ্যবই ছাপাতে ৩০০ কোটি টাকার সাশ্রয়

আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজ তৈরির পার্লপের অস্বাভাবিক দরপতন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নোট গাইড ও প্রকাশনা শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যের বই ছাপা খাতে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তুরে প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপায় নির্ধারিত দামে চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে দামে দরপত্রে অংশ নিয়েছে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে সরকারে বিশাল অংকের এ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এ টাকা সাশ্রয়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। তবে কম দামে কাজ দিতে গিয়ে বই এর মানে যেন ধস না নামে সেটি নিশ্চিত করতে পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজ তৈরির পার্লপের অস্বাভাবিক দরপতন, গেল বাজেটে কাগজের ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট (২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ) কমানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নোট গাইড ও প্রকাশনা শিল্প বন্ধ থাকা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী রফতানি বন্ধ থাকায় টন প্রতি কাগজের দাম কমেছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও কাগজের মিলগুলো করোনাকালীন ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও নগদ টাকার সংগ্রহে কম লাভে কাগজ বিক্রি করেছে। এ কারণে সরকারের নির্ধারিত দামের (প্রাক্কলন) চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম দামে দরপত্র জমা দিয়েছে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছরের চেয়ে টন প্রতি ২৮ হাজার টাকা কম দামে, এ ছাড়াও এনসিটিবি সপ্তম শ্রেণীর বই সিট মেশিনে ছাপানোর জন্য ১৩ হাজার মেট্রিক টন কাগজ ও বইয়ের মলাটের জন্য ১৩০০ আটপেপার কেনাতেও প্রায় ৩৯ কোটি টাকায় সাশ্রয় হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত কম দামে কাজ দিলে বই মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলনের চেয়ে মাত্রারিক্ত কম দামে বই ছাপার দাম দিয়েছে তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। তারা করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে সামনে রেখে শেষ সময়ে নিম্নমানের বই দিতে পারে। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের পিজি (পারফরম্যান্স সিকিউরিটি) বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্রের নির্ধারিত দরের প্রায় ৩০ শতাংশ কমে জমা দেয়ায় এবার ভালো অংকের টাকা সাশ্রয় হবে। টাকার পরিমাণ কত তা এখনো হিসেব হয়নি। তিনি বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের দাম কমে যাওয়া এবং পেপারমিলগুলো কম লাভে কাগজ বিক্রি করায় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে কাজ করতে ইচ্ছুক হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাকল্প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানো হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের প্রায় ২৪ কোটি ৪১ লাখ বই ছাপানো হবে। এতে সরকার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। প্রাথমিকের বইয়ের চাহিদা এখনো না এলেও গত বছরের চাহিদা ধরে প্রায় ১০ কোটি ৫৪ লাখ বই ধরে দরপত্র দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে বিনামূল্যের ৩৫ কোটি বই ছাপানোর সরকারের সম্ভব্য ব্যয় ধরা ধরা হয়েছে সাড়ে ১১০০ কোটি টাকা কিন্তু সেই টাকা থেকে প্রায় ৩০০ কোটি সাশ্রয় হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রাথমিকের সাড়ে ১০ কোটি বই ছাপাতে ৯৮টি লটে টেন্ডার করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। ভারতের দু’টি প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির একজন সদস্য বলেন, সবক’টি লটে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম দামে দরপত্র জমা দিয়েছে মুদ্রণকারীরা। এখানে সরকার প্রায় ৩০০ কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এ ছাড়াও মাধ্যমিক স্তরে এনসিটিবি সিট মেশিনের জন্য কাগজ কিনে দেয়। এবার ১৩ হাজার মেট্রিক টন হোয়াটপেপার (৬০ ডিএসএম) ৬৫ হাজার টাকা দরে কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর এ কাগজ ৯৩ হাজার ২২৪ টাকা করে ছিল। টন প্রতি ২৮ হাজার টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে। গত বছর প্রতি টন আর্টকার্ড ক্রয় করা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ২০০ টাকা করে। এ বছর প্রতি টন ৯৩ হাজার টাকা দরে ক্রয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বছর ১৩০০ টন আট কার্ড কেনা হবে। গত বছর কেনা হয়েছিল ২৪০০ টন। গত বছর ক্রয় করা ৩০০ টন কার্ড বাফারের গুদামে মজুদ থাকায় এ বছর আর্ট কার্ড কম কেনা হচ্ছে। এ বছর কাগজ ক্রয় করতে বাজেট থেকে ৩৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে শুধু মাধ্যমিকে স্তুরেই সাশ্রয় হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিযোগিতা ও করোনাকালীন ব্যবসায় টিকে থাকতে তারা কম লাভে কাজ করতে প্রায় ৩০ শতাংশ কমে দরপত্র জমা দিয়েছি। তারা বলেন, এনসিটিবি বইয়ের দাম যখন ঠিক করে তখনো কাগজের দাম এত কমেনি। কিন্তু আর্ন্তজাতিক বাজারে কাগজের দাম কমে যাওয়ার খবর পেয়ে প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম দাম হাঁকিয়েছি। এতে সরকারের কয়েক শ’ কোটি টাকা সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশীয় শিল্প রক্ষা পাবে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলেন, গত বছর কাগজের প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করার সময়ে পার্লপের টন প্রতি দর ছিলে সাড়ে ৮০০ ডলার। এ বছর এ দর ৪৬০ ডলারে নেমে এসেছে। যে কারণে টন প্রতি কাগজের দাম প্রায় ৩০ হাজারে বেশি কমে গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × three =

Back to top button