শিল্প ও বাণিজ্য

কালীগঞ্জের পাটের জুতা যাচ্ছে ইউরোপে

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তৈরি পাটের জুতা এখন বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাহিদা অর্জন করেছে। উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে নারীদের হাতে পাটের তৈরি মানসম্মত বিভিন্ন ধরনের জুতা ফ্রান্স, প্যারিস, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশে ফ্যাশন শোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানিও করা হচ্ছে।

এই জুতা তৈরি করছে অ্যামাস ফুটওয়্যার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এ প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার প্রায় ৫০০ নারীর। তাদের মধ্যে অধিকাংশই গৃহিণী। বাড়ির কাজের পাশাপাশি তারা হাতে তৈরি করছেন পাটের জুতা। অনেক নারী এখান থেকে আয় করে সংসার চালাচ্ছেন।

অ্যামাস ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবাইদুল হক রাসেল জানান, পড়াশোনা শেষ করে তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় প্রথম গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করেন।

এর পর ২০১৬ সালের দিকে তিনি এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার আগ্রহ নিয়ে এবং দেশের পাটশিল্পকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরার জন্য আগ্রহ দেখান।

তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের রঘুনাথপুর বাজারের পাশে ৪৪ শতক জমি কিনে পাটের জুতা তৈরির কারখানা করেন। তিনি দেশ ও বিদেশ থেকে কিছু মেশিনও সংগ্রহ করেন। এর পর বিভিন্ন পাটের কারখানা থেকে উৎপাদিত পাটের কাঁচামাল ক্রয় করে এনে এখানে পাটের জুতা তৈরি শুরু করেন।

তার উৎপাদিত পাটের জুতা ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে এখানকার উৎপাদিত পাটের জুতা দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে।

তিনি জানান, তার কারখানায় ৮০ জন নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এ ছাড়া এলাকার প্রায় ৪০০ নারী এখান থেকে কাজ নিয়ে গিয়ে বাড়িতে করেন। তাদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দেয়া হয়। প্রতি জোড়া জুতার জন্য তারা বিল পেয়ে থাকেন। একজন নারী বাড়ির অন্য কাজের পাশাপাশি হাতে এই জুতা তৈরি করে থাকেন। তারা ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন।

ওবাইদুল হক রাসেল আরও জানান, তার ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত জুতা বিভিন্ন দেশে তিনি ২ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করেন। ২ ডলারের জুতা বিদেশে ১৫-২০ ডলারে বিক্রি হয়। ইতিমধ্যে তার উৎপাদিত পাটের জুতা দিয়ে প্যারিসে ফ্যাশন শো হয়েছে।

তিনি বলেন, নিজেই এ জুতার মার্কেটিং করেন। নিজেই বায়ারদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রফতানি করেন। পাটের জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

অ্যামাস ফুটওয়্যার লিমিটেডের ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, এই কারখানায় ছয়টি ধাপে একটি জুতা তৈরি করা হয়। সোল্ড তৈরি হয় রাবার দিয়ে, জুতা তৈরি হয় পাট দিয়ে। আর এই কাজগুলো সম্পূর্ণ হাতের মাধ্যমে করা হয়। প্রতি মাসে তাদের কারখানা থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার জুতা রফতানি করা হচ্ছে।

তিনি জানান, এই জুতার বৈশিষ্ট্য হলো– ব্যবহারের পর ফেলে রাখলে এটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। সোল্ড তৈরি হয় দেশের প্রাকৃতিক রাবার থেকে। আর ওপরের অংশ তৈরি হয় পাট থেকে। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশসম্মত।

পাটের উৎপাদিত জুতা দেশে কয়েকটি কারখানা থাকলেও খুলনা বিভাগে এটি প্রথম। এখানে কর্মরত নারীরা প্রথমে ফ্রি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর পর কারখানা থেকে তারা সোল্ড এবং পাট নিয়ে যায়। এর পর কাজের পাশাপাশি হাতে জুতা সেলাই করেন। একজন নারী প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫ জোড়া জুতা তৈরি করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 2 =

Back to top button