ধর্ম ও জীবন

যাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে

নিসাবের মালিক হওয়ার পর এক বৎসর অতিবাহিত হলেই সঙ্গে সঙ্গে যাকাত ওয়াজিব হয়। বিলম্ব করা জায়েয নাই। তবে বর্ষপূর্তির পূর্বে আদায় করা জায়েয।

যাকাত প্রদানের খাত

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيم

আল্লাহ  তায়ালা বলেন, “যাকাত তো কেবল

১. নিঃস্ব,

২. অভাবগ্রস্ত ও

৩. তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য,

৪. যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য,

৫. দাসমুক্তির জন্য,

৬. ঋণ ভারাক্রান্তদের,

৭. আল্লাহর পথে ও

৮. মুসাফিরের জন্য ” (তওবা,আয়াত-৬০)।

অসহায় এতিম, গরীব, মিসকীন, আশ্রয়হীন, গরীব বাস্তুহারা, দরিদ্র শিক্ষার্থী প্রভৃতি দুঃখী জনগোষ্ঠি যাকাতের প্রকৃত হকদার। ইহাদের মধ্যে গরীব আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশী অধিক হকদার। কর্মঠ গরীবদেরকে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়। দ্বীনের প্রসারে ও দ্বীনী শিক্ষার বিস্তারে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়।

যথার্থ কারণে ঋণগ্রস্ত এবং ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়লে তাদের ঋণ মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যায়। সফরকারী যদি আর্থিক অসুবিধায় পতিত হয়, তবে তাকে যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যায়, যদিও তার বাড়ীর অবস্থা ভালো হয়। নও-মুসলিমকে পুনর্বাসনের জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যায়। যাকাত এমন লোককেই দিতে হবে যারা যাকাত নিতে পারে।

যাদেরকে যাকাত দেয়া যাবেনা

ধনী ব্যক্তির জন্য যাকাত খাওয়া বা ধনী ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। আপন দরিদ্র পিতা-মাতা, দাদা-দাদী তথা ঊর্ধ্বস্থ সকল নারী-পুরুষ, অনুরূপ ভরণ- পোষণে নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা এবং স্বামী স্ত্রীকে যাকাত প্রদান করা জায়েয নাই। যাকাত বহির্ভুত সম্পদের দ্বারা তাহাদের ভরণ-পোষণ করা ওয়াজিব।

অনুরূপ মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রকৃত বংশধরদের সম্মান ও মর্যাদার কারণে যাকাতের অর্থ দ্বারা সাহায্য করা জায়েয নয়। একমাত্র দানের অর্থ দ্বারাই তাদের খেদমত করা জরুরী। মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি নির্মাণের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা নিষেধ। সাধারণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করাও জায়েয নয়।

তবে আশ্রয় কেন্দ্রে দুরাবস্থা সম্পসারণ আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে দেয়া জায়েয। মনে রাখতে হবে যাকাত পরিশোধ হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া শর্ত। সুতরাং যাকাতের অর্থে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করাও জায়েয নয়। যা

কাত দেওয়া যেমন শরীয়তের বিধান, অনুরূপ যাকাত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকেই যাকাত দেওয়া শরীয়তের বিধান। সঠিক পাত্রে যাকাত প্রদান না করলে যাকাত পরিশোধ হবে না।

সামাজিক কল্যাণে যাকাত

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অর্থনৈতিক স্তম্ভ। ইসলামে যাকাত ব্যবস্থা সমাজের দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্ট দূর করা ও মানবতার কল্যাণ সাধন করা। ধনীদের সম্পদে গরীব ও বঞ্চিতের হক রয়েছে। সঠিক হিসাব করে নিয়মিত যাকাত প্রদান করার ফলে ধনীর সম্পদের উপর গরীবের হক পরিশোধ হয়।

ফলে সম্পদ পরিশুদ্ধ ও হিফাযত হয়, যাকাতদাতার মনকে লোভ থেকে পবিত্র করে এবং দান ও ত্যাগ স্বীকারে অভ্যস্থ হতে সাহায্য করে। যাকাত প্রদানকারীর জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ  তায়ালার নিকট হতে অগণিত পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ।

যাকাতের উপকারভোগী সমাজের দূঃখী-দরিদ্র জনগোষ্ঠি। যাকাতের অর্থে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠির অভাব পূরণে সহায়তা করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস পায় এবং সমাজে ধনী- দরিদ্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহানুভূতির গুণাবলী বৃদ্ধি পায়।

জাকাতের নিয়ত:

নিয়ত যাকাতের একটি গুরুত্ব রোকন। যাকাতের অংশ মূল সম্পদ হতে বের করার সময় নিয়ত অবশ্য করতে হবে। এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হতে হবে।

দান-খয়রাত

সম্পদ উপার্জনের লক্ষ্য দুনিয়ার ও আখিরাতের শান্তি লাভ করা। উপার্জনকারী নিজের প্রয়োজন পূরণের পর তার নিকট যে সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, তা সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। তাই যাকাত ছাড়াও সম্পদ হতে স্বীয় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, এতিম, মিসকিন ও সাহায্য প্রার্থীদের এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতে হয়। আল্লাহ  তায়ালা দানকে বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =

Back to top button