বিচিত্র

কেক কেটে উদযাপিত হলো ‘প্রথম পিরিয়ড’

ঋতুমতী হয়েছে মেয়ে, শুরু হয়েছে নারী জীবনের নতুন এক অধ্যায়; লাল রঙের একটি কেক কেটে সেই উপলক্ষ্যকে উদযাপন করেছে ফেনী শহরের এক পরিবার।

ফেইসবুকে ‘প্রজেক্ট কন্যা’ নামের একটি পাতায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেই কেকের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই প্রথম মাসিক উদযাপনের এই ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ প্রজেক্ট কন্যার পরিচালক আতিয়া নূর চৌধুরী বলেন, পরিবারের ‘ছোট্ট মেয়েটি’ ভয় না পেয়ে পিরিয়ড বিষয়টি যেন সহজভাবে নিতে পারে, তাই এ উদযাপন। মাসিক নিয়ে কথা না বলার একটা চর্চা রয়েছে। তবে এতে পরিবর্তন আনছেন অনেকেই; এমনকি মফস্বলের পরিবারগুলোও। এই পরিবারটিও তেমন একটি উদাহরণ।’

“কেকটা অনেকটা সিঁড়ির অবয়বে বানানো এবং এতে একটা ছোট মেয়ের প্রতি ধাপে বড় হয়ে উঠার গল্প ফোটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।”

লাল রঙের ওই কেক বানানো হয়েছে চার ধাপের সিঁড়ির আকারে। প্রতিটি ধাপে ছোট থেকে বয়ঃসন্ধি বেলার কন্যা শিশুর একটি করে আদল বসানো। কেকটির নিচে লেখা: ‘নিউ লাইফ…’।

কেকটি বানিয়েছেন ফেনী কলেজে পলিটিকাল সায়েন্সে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান চৌধুরী প্রিমা। ঘরেই বাণিজ্যিকভাবে কেক বানাচ্ছেন তিনি। সেজন্য ‘কেক মি অ্যাওয়ে বাই প্রিমা’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজ চালান তিনি।

প্রিমা বলেন, ‘লকডাউনের শুরুতে শখের বসে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে ভালো সাড়া পাওয়ায় ফেইসবুকে পেইজ খুলে ফেলি।’

লাল রঙের সেই বিশেষ কেকের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”আমার অধিকাংশ ক্রেতাই রিপিট কাস্টমার, তাই তাদের সঙ্গে আমার মোটামুটি পরিচয় রয়েছে। পরিচিত একজন আপু তার মেয়ের প্রথম পিরিয়ড সেলিব্রেট করার জন্য আমাকে কেকের অর্ডার দিয়েছিলেন। ”

লাল রঙয়ের চকলেট কেকের নকশাটা ‘বেশ চিন্তাভাবনা’ করেই করতে হয়েছিল বলে জানালেন প্রিমা। ‘কেকের এক একটা ধাপকে জন্মলগ্ন থেকে পূর্ণ নারী হয়ে ওঠার পর্যায় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছিলাম। কতটুকু সফল হয়েছি জানি না, তবে যাদের জন্য বানানো হয়েছে তারা বেশ পছন্দ করেছিলেন।’

যে পরিবার ওই কেক অর্ডার করেছিলেন, পরে তাদের অনুমতি নিয়েই প্রজেক্ট কন্যার ফেইসবুক পাতায় ছবিটি প্রকাশ করা হয়।

সেই পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, প্রশংসা করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় কন্যা সন্তানের প্রথম পিরিয়ড উদযাপনের প্রথা নিয়েও লিখেছেন কেউ কেউ।

ভারত থেকে সংকলিত দত্ত চৌধুরী লিখেছেন, “আসামে কিন্তু এই প্রথম মাসিক দিনটি অনুষ্ঠান করে উদযাপন করার রীতি আছে! শুধু আমাদের মধ্যেই যত রাখ ঢাক করা হয়ে থাকে! খুবই লজ্জার!”

শুভ্র আমিন লিখেছেন, নোয়াখালীতে মেয়ের প্রথম পিরিয়ড হলে আশপাশের লোকজন ও আত্মীয়দের এক ধরনের নাড়ু, যেটাকে আঞ্চলিক ভাষায় ঝাল্লায়ু বলে, সেটা বিলি করা হত।

নিজের প্রথম মাসিক হওয়ার পর পরিবারের সবার আন্তরিকতার কথা জানিয়ে নুসরাত রহমান নিতু লিখেছেন, ”খুব সুন্দর আইডিয়া। প্রথম পিরিয়ডের সময় কতরকম চিন্তা আর ভয় যে এসে ভর করে। আমার সময় আমার জন্য আব্বু নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়েছিলেন। তখন ব্যাপারটা নরমালি নিই।”

প্রজেক্ট কন্যার ফেইসবুক পাতায় দেওয়া ওই পোস্ট এরেই মধ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। অধিকাংশ মন্তব্যকারী সাধুবাদ জানালেও কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে।

প্রজেক্ট কন্যায় কেকের ছবি ও এর উপলক্ষ্য জানিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর ওই পরিবার ‘নানা প্রশ্নের’ সম্মুখীন হয়েছিল বলে জানালেন আতিয়া নূর চৌধুরী।

ওই পোস্টে কিছু ‘আজেবাজে’ মন্তব্য দেখার পর পরিবারটি আর এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।

তবে ফেইসবুকেই নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের উদ্দেশে পাল্টা জবাব দিয়েছেন অনেকে। হৃদয় হাওলাদার নামে একজন লিখেছেন, “নারীর প্রথম পিরিয়রড সেলিব্রেট হোক, সকল ট্যাবু দূর হোক।”

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + fifteen =

Back to top button