কেমন ছিলো রাসূল সাঃ এর দেশপ্রেম?
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের আদর্শ এবং সব কাজের অনুপ্রেরণা। রাসূলের (সা.) প্রতিটি কথা ও কাজ আমাদের করণীয়। মাতৃভূমির প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। মহানবী (সা.) যখন মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে পাড়ি জমাচ্ছিলেন ইয়াছরিবের (মদিনার পূর্বনাম) প্রতি, তখন মাতৃভূমির প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পায়।
হজরত আবদুল্লাহ বিন আদি বিন হারাম (রা.) বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) ‘খাজওয়ারা’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ, (হে মক্কা) আল্লাহর জমিনে তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ… যদি তোমার কাছ থেকে আমাকে বের করে দেওয়া না হতো, তবে আমি তোমায় ছেড়ে অন্য কোথাও যেতাম না।’ (তিরমিজি, ৩৯২৫) এ আবেগময়, বেদনাকাতর অভিব্যক্তি রাসূলের (সা.) দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
অন্য হাদিসে হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে রাসূলের (সা.) সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসূল (সা.) যখন ফিরে এলেন, ওহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেন, ‘এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি।’ (বুখারি, ২৮৮৯)।
হিজরত করে মদিনায় গমন করার পর রাসূল (সা.) প্রায়ই মক্কায় ফিরে যেতে ব্যাকুল হয়ে পড়তেন। আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘যিনি তোমার জন্য কোরআনকে (জীবন) বিধান বানিয়েছেন, তিনি তোমাকে অবশ্যই তোমার জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।’ (সূরা কাসাস, আয়াত ৮৫)।
মদিনাকেও রাসূল ভালোবাসতেন। হাদিসের বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.) মদিনা শরীফকে খুব ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে ফিরে আসার সময় সীমান্তে ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজির চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত। তিনি বলতেন, এই ওহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে, আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। (বুখারি শরীফ ২/৫৩৯,৩/১০২৮, মুসলিম শরীফ ২/৯৯৩)।
রাসূলের সুন্নাত হিসেবেই দেশপ্রেম আর রাষ্ট্রের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র। আজ ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক অন্য রকম দিন। আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো তার মাতৃভূমিকে ভালোবাসা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর নির্যাতন, লুটপাট আর হত্যাকাণ্ড চালায়। ইসলাম এ ধরনের হত্যা বা নির্যাতন সমর্থন করে না। হাদিসে বর্ণিত আছে- ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি)
একজন নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যা করার সমান। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে সবচেয়ে বড় গুনাহ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নরহত্যার ভয়ানক পরিণাম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত :৩২)
মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘যদি আসমান-জমিনের সব অধিবাসী একজন মুসলমানকে অবৈধভাবে হত্যা করার জন্য একমত পোষণ করে, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
পবিত্র কোরআনেও বলা আছে- ‘কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সূরা আশ-শুরা, আয়াত :৪২)
বিজয় স্বাভাবিকভাবে সবার কাছে আনন্দের বিষয়। এ জন্য আল্লাহর দরবারে আমাদের শোকরিয়া আদায় করা উচিত। নবী সাঃ কিভাবে বিজয় উদযাপন করেছিলনে সেটি অনুসরণ করা উচিত। যে মক্কা নগরী থেকে আল্লাহর নবী বিতাড়িত হলেন, ১০ বছর পর শত-সহস্র সাহাবায়ে কেরামের বিশাল বহর নিয়ে যখন পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি বিজয় মিছিল-শোভাযাত্রা কিছুই করেননি। গর্ব-অহঙ্কার করেননি, বাদ্য-বাজনা বাজাননি।
নবীজি সাঃ আল্লাহর দরবারে বিনয়ের সঙ্গে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন। সর্বপ্রথম তিনি উম্মে হানির ঘরে প্রবেশ করেন। সেখানে ৮ রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এ নামাজকে বলা হয় বিজয়ের নামাজ।
রাসূলের জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য কাজ করা, দেশের শত্রুদের সাথে লড়াই করে নিজ দেশের স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
আল্লাহ আমাদের দেশের সকল জনগন ও শাসক গোষ্ঠিকে দেশের সম্মান, ষ্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।