গোল্ডেন মনিরের ‘উত্থানে জড়িতদের’ শনাক্ত করা হবে: র্যাব
গোল্ডেন মনির ছিলেন সুবিধাবাদী একজন রাজনীতিবিদ। ৯০-এর দশকে সেলসম্যান থেকে লাগেজ ব্যবসা এবং স্বর্ণ চোরাচালানি ও ভূমি দখলে তিনি রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন। নিজের নামে-বেনামে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অবৈধভাবে মনির হোসেন থেকে ‘গোল্ডেন মনির’ হওয়ায় এ ‘উত্থানের পেছনে কারা কারা জড়িত রয়েছে’ তাদের শনাক্তে কাজ করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘৯০ এর দশকের একজন সেলসম্যান থেকে সে কুকারিজ ব্যবসা শুরু করেন। এরপর লাগেজ পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস পণ্য আমদানি করতেন। এরপর মনির স্বর্ণ চোরাকারবারে যুক্ত হন। অবৈধপথে স্বর্ণ চোরাচালান শুরু করেন মনির।’
এরপর গোল্ডেন মনির রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেখানে জাল স্ট্যাম্প, জাল সিল তৈরি করে ভুয়া দলিল করে রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে প্লট ও জমি দখল করেছেন। এছাড়াও তার বাসা থেকে ২টি এবং অটোকার সিলেকশন থেকে ৩টি অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়। এসব বিষয়ে আমরা সরকারের ৪টি সংস্থাকে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুরোধ জানাবো।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গোল্ডেন মনির দেশের বাইরে কি পরিমান অর্থপাচার করেছে বা কী পরিমাণ সম্পদ তার রয়েছে সে বিষয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করবো। তিনি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে কসমেটিকস পণ্য ও চোরাচালানির মাধ্যমে কি পরিমাণ স্বর্ণ দেশে এসেছিলেন সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুসন্ধান করতে অনুরোধ করবো। এদিকে অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি (প্রত্যকটি ৩ কোটি টাকা মূল্যের) আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটিকে (বিআরটিএ) অনুসন্ধানের জন্য আমরা বলবো। এছাড়াও সে জাল-জালিয়াতি করে ভুমি দখল করেছে সেসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) অনুসন্ধানের জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো র্যাবের কর্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয় বিধায় আমরা সরকারের ৪ সংস্থাকে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি। র্যাব শুধুমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘আজ (রবিবার) তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বাড্ডা থানায় র্যাব বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেছে। তার বাসা থেকে বিদেশি পিস্তল উদ্ধারের বিষয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা, বিদেশি মদ উদ্ধারের কারণে মাদক আইনে একটি মামলা এবং ৬০০ ভরি স্বর্ণ, ডলার ও টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
গোল্ডন মনিরের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা হয়েছিল, এবং সিল জালিয়াতি করে ভুয়া দলিল তৈরিতে রাজউকের কনা একটি মামলা। মোট দুটি মামলা মনিরের বিরুদ্ধে আগেই ছিল।
আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের বাসায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি রাজউকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেসে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট ও জমি দখল করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩০ টি প্লট রয়েছে বলে সে স্বীকার করেছেন। আমরা আশা করছি, তদন্তে তার সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।’
গোল্ডেন মনির তার আয়কর রিটার্নে যে সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন, আসলে তার সঙ্গে অনেক ফারাক রয়েছে।
উত্তরায় জমজম টাওয়ারে গোল্ডেন মনিরের মালিকানার বিষয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সত্যতা পেয়েছি। র্যাবের একটি দল জমজম টাওয়ারে অভিযান চালিয়েছে। জানা গেছে, জমজম টাওয়ারে গোল্ডেন মনিরের যে মালিকানা ছিলো সেটি গত ১ মাস আগে তার অন্য অংশীদারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। জমজম টাওযারের বাজার মূল্য প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি।’
মনির একদিনে গোল্ডেন মনির হয়ে উঠেনি। সুবিধাবাদের রাজনীতির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন জনকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলেও জানান আশিক বিল্লাহ।