Breakingদেশবাংলা

চালুর আগেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ধস

উপজেলা প্রশাসন আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ঠেলাঠেলির কারণে কেটে গেছে প্রায় আড়াই বছর। উদ্বোধন হয়নি আশুগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। এর মধ্যেই দেবে গেছে নতুন ভবনটির পার্কিং বেজমেন্ট। হেলে পড়েছে নিরাপত্তা দেয়ালের একাংশ। প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় চুরি গেছে অন্তত ৪০টি পাখাসহ বৈদ্যুতিক ও স্যানিটারি সরঞ্জাম। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চারতলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মিত হয়। দরপত্রের মাধ্যমে ভবনটি নির্মাণে দায়িত্ব পায় স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টার লাইট সার্ভিসেস এবং মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স (জেবি)। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা। ২০২০ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডির কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনের সামনে যে পাশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন করা, সে পাশের প্রায় ২৪ বর্গফুট (৪ ফুট প্রস্থ ও ৬ ফুট দীর্ঘ) পার্কিং বেজমেন্ট দেবে গেছে। ফাটল ধরেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির বিভিন্ন স্থানে। দক্ষিণ পাশের নিরাপত্তা দেয়ালের প্রায় ১০ ফুটের একটি অংশও হেলে পড়েছে। দ্রুত মেরামত না করলে পুরো পার্কিং বেজমেন্ট দেবে যাওয়ার আশঙ্কা সংশ্নিষ্টদের।

ভবনটি পরিদর্শন শেষে উপজেলা প্রকৌশলী পৃথুল ভৌমিক জানান, বেজমেন্টের নিচের বালু সরে যাওয়ায় দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া হেলে পড়া অংশ মূল দেয়াল থেকে আলাদা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তাঁর নির্দেশ মতো সংস্কার কাজ শুরু হবে।

জানা গেছে, হস্তান্তরের পর ভবনটি উদ্বোধন করতে চেয়েছিলেন উপজেলা প্রশাসনের লোকজন। তবে তাতে আপত্তি জানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা চান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ভবনটি উদ্বোধন করুন। এ নিয়ে দুই পক্ষের ঠেলাঠেলিতে হস্তান্তরের প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও ভবনটি উদ্বোধন হয়নি। এটি প্রায় পরিত্যক্ত ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে। চুরি হয়ে গেছে সৌরবিদ্যুতের ব্যাটারি, সব বৈদ্যুতিক তার, সুইচ, সুইচ বোর্ড, বাথরুম, ওয়াশরুমের সব স্টিলের ট্যাব (নলকা) ও অন্তত ৪০টি বৈদ্যুতিক পাখা।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য, উদ্বোধন না হওয়ায় এটি একেবারেই নিরাপত্তাহীন। উদ্বোধন হলে কমপ্লেক্সের দোকান ও হলরুম ভাড়া দেওয়া সম্ভব হতো। এতে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এর আয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ দুস্থ মানুষকে সাহায্য করা সম্ভব হতো। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে একাধিকবার সময় চেয়ে না পাওয়ায় ভবনটি এখনও উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার মোজাম্মেল হোসেন গোলাপ, আবুল হাসেম আজাদ ও আব্দুল করিমের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ হলেও উদ্বোধন না হওয়ায় কোনো কাজে আসছে না। এটি চালু হলে দোকান ও হলরুম ভাড়া দিয়ে যে আয় হতো, তা দিয়ে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করা যেত। বারবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েও পাননি। বিষয়টিকে তাঁদের প্রতি অবহেলা মনে করছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণ পার্কিং বেজমেন্ট ধসে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম বলেন, এখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি কিছুটা হলেও আছে। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভবনটি মেরামত করে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক তোফায়েল আলী। তাঁদের ভাষ্য, তিন বছর আগে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে তাঁদের কোনো গাফিলতি নেই। তাঁদের দাবি, খালের ওপর মাটি ভরাট করে পার্কিং বেজমেন্ট করায় ধসের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন চাইলে সংস্কার কাজে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জিনিসপত্র চুরি, পার্কিং বেজমেন্ট ও দেয়াল ধসের কথা স্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অরবিন্দ বিশ্বাস। তিনি সমকালকে বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এটি সংস্কার ও উদ্বোধনের আশা করছেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 1 =

Back to top button