অপরাধ ও দূর্ঘটনা

চুরি হওয়া ‘বিদ্যানন্দের ত্রাণের গাড়ি’ কীভাবে উদ্ধার করলো পুলিশ?

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন-ই হলো সেই প্রতিষ্ঠান যা কিনা করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে ছুটে চলা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির একটি পিকআপ রাস্তা থেকে চুরি হয়ে যায়।

ঘটনাটি জানতে পেরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সেটি উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেফতার হয় সুমন খান নামে চোর চক্রের এক সদস্য।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘বিদ্যানন্দের ত্রাণের গাড়ি চুরির বিষয়টি জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত উদ্ধারের নির্দেশ দেই। দিনভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ পিকআপটি উদ্ধার করেছে। চোর চক্রের এক সদস্য আমাদের হাতে ধরা পড়েছে। একই চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে চেষ্টা চলছে।’

যেভাবে চুরি হয় গাড়িটি

সংশ্লিষ্টরা জানান, ত্রাণ বিতরণ শেষে গত ৯ জুন ভোর ৪টার দিকে বিদ্যানন্দের গাড়িটি চালক কাফরুল থানাধীন মিরপুর-১৪ নম্বরে মেট্রো শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পার্কিং করে। হাতমুখ ধোয়ার জন্য চালক মমিন ও জাহিদ পাশের জসিমের হোটেলে যায়। আধঘণ্টা পর তারা ফিরে এসে দেখে পিকআপ নেই। তারা দ্রুত বিষয়টি বিদ্যানন্দের ঊর্ধ্বতনদের জানালে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। পুলিশ গাড়িচালক মমিন ও সহকারী জাহিদকে নিয়ে অভিযান শুরু করে।

যেভাবে উদ্ধার করা হলো গাড়িটি

জানা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে গাড়িটি উদ্ধারে একটি টিম গঠন করে কাফরুল থানা পুলিশ। তারা এলাকার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করতে থাকে। ইতোমধ্যে গাড়িচালক মমিনের মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, পল্লবী থানাধীন কালশী এলাকার একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পিকআপ ফেরত পাওয়া যাবে। এরপর কাফরুল থানার টিম ছদ্মবেশে মমিনকে নিয়ে গাড়ি উদ্ধারের জন্য কালশী যায়।

অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তারা প্রথমে কালশী, ২২ তলা গার্মেন্টস এলাকা, মিরপুর-১২ নম্বরের মুসলিমবাজার, সিরামিক গেট ও লালমাটিয়া এলাকায় অভিযান চালায়।

পরে সুমন খান নামে একজনের কাছে গেলে গাড়িটির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে জানায় অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পল্লবী থেকে সুমনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, অজ্ঞাতনামা চোর চক্রের সদস্যরা তার চেনা। পিকআপ কিনতে চোরকে ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাব দিলে তা উদ্ধার করা যাবে।

পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী সুমন চোর চক্রের একজনকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা হাতে পাওয়ার কথা জানায় এবং গাড়ি ফেরত দিতে বলে। তার ফোন পেয়ে চোর চক্রের সদস্যরা কিছুক্ষণ পর গাড়িচালক মমিনকে ফোন করে জানায়, গাড়িটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মদিনা মসজিদের সামনের রাস্তায় রাখা আছে। পুলিশ দ্রুত সুমনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটি উদ্ধার করে।

কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী যুবরাজ হোসেন জানান, সুমনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে চোর চক্রের সদস্যদের নাম বলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি, বিশেষ করে সিএনজি চুরি করে আসছিল। চুরি হওয়া সিএনজি ফেরত পেতে মালিকদের সুমনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলতো তারা। সুমন হাতে টাকা পেয়ে চোরদের কাছ থেকে গাড়ি ফেরত এনে দিতো।

এসআই কাজী যুবরাজ হোসেন আরও জানান, সুমনকে বুধবার (১০ জুন) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোর চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + seventeen =

Back to top button