Lead Newsজাতীয়রাজনীতি

চ্যালেঞ্জের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব!

দলে বিভক্তির মধ্যেই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা আওয়ামী লীগের

জুলাই অভ্যুত্থানে দেশে অসংখ্য মানুষ হতাহতের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বর্তমানে ভারতে আশ্রিত আছেন। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ নতুন সংকটের মধ্যে পড়েছে। দলের নেতারা নিজেদের দোষ স্বীকার না করে, একে অপরকে দোষারোপ করছেন। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে পলাতক দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। এমনই এক বাস্তবতায় দলে স্পষ্টত বিকাশমান বিভক্তিরেখার মাঝেই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হিয়েছে- প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ ও ‘অপশাসন-নির্যাতনের প্রতিবাদে আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারি ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতরাতে দলটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এবং হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি বুধবার পর্যন্ত দাবির লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করবে দলটি। ছয়ই ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। আর ১৬ই ফেব্রুয়ারি রোববার অবরোধ এবং ১৮ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

ঐ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা প্রত্যাহার এবং ‘প্রহসনমূলক বিচার’ বন্ধেরও দাবি জানানো হয়। এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ক্ষমতাচ্যুত দলটি। ক্ষমতাচ্যুত এই দলের পক্ষ থেকে এর আগে গত ১০ই নভেম্বর রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েও নামতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থার মধ্যেই মঙ্গল হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ ও বিক্ষোভের ডাক দিলো আওয়ামী লীগ।

যদিও ৫ই অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের কোথাও দলটির সক্রিয় কোন কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। দলটির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই দেশের বাইরে, পলাতক অথবা কারাগারে রয়েছেন। গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই রয়েছেন দলটির বড় একটি অংশ।

এদিকে, বার্তাসংস্থা আল জাজিরা’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে অসংখ্য মানুষ হতাহতের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ এখন নতুন সংকটের মুখোমুখি। দলের নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। তাছাড়া তৃনমূল পর্যায়ে নেতাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, দল এখন জনগণের সাথে সংযোগ হারিয়জায়

আলজাজিরার ঐ রিপোর্টে বলা হয়- দলটির অনেক নেতাই মনে করেন ২০১৪ সাল থেকে দলের নেতৃত্ব পরিবার ও সুযোগসন্ধানীদের হাতে চলে গেছে, যা এই বিপর্যয়ের কারণ। আওয়ামী লীগ এখনও ছাত্র আন্দোলনের জন্য কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। দলটির যুব শাখা যুবলীগ আন্দোলনকে “সন্ত্রাসীদের উত্থান” হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে আন্দোলন হয়েছিল।

সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগ এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার পর দলের পুনর্গঠন খুব কঠিন। নেতাদের মধ্যে একতা না থাকলে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব হবে না। দোষারোপের মারপ্যাঁচে শেখ হাসিনার নেতৃত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশ্লেষকরা তাই বলছেন- আওয়ামী লীগ যদি ফের জনআস্থা অর্জন করতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই ২০২৪ সালের আন্দোলনে ঘটিত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে, বর্তমান নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে হবে এবং বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + 18 =

Back to top button