দেশবাংলা

ছাগল খামারি যশোরের তুতুল এখন সফল

যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শায় বেকার যুবক ইকবাল হাসান তুতুল বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালন করে এখন স্বাবলম্বী। দেশে ছাগলের মাংসের মূল্য বেশি তাই খামার গড়ে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। শখের বসে ছাগল পালন করে তুতুল এখন একজন সফল খামারি।

আট বছর আগে চারটি ছাগল পালন শুরু করেছিলেন বেকার তুতুল। এখন তাঁর খামারে ছাগলের সংখ্যা তিন শতাধিক। যার দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তাঁর খামারে দেশি ছাগলের পাশাপাশি বিদেশি জাতের ছাগলও পালন করা হচ্ছে। তুতুলের সফলতা দেখে অনেকেই ছাগলের খামার করতে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে।

যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় তুতুল তাঁর বসতবাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন ছাগলের এই খামার। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় শখের ছাগল পালন এখন তাঁর ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

ইকবাল হাসান তুতুল বলেন, ‘২০১২ সালে শখ করে ২০ হাজার টাকায় চারটি ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করি। এক বছর পর সেই চারটি ছাগল ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করি। লাভ হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিই ছাগলের খামার করার।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে দেশি ব্লাক বেঙ্গল প্রজাতির ছাগল কিনে ম্যাচিং পদ্ধতিতে খামার গড়ে তোলেন। সেখানে এখন চার প্রজাতির তিন শতাধিক ছাগল আছে।

তুতুল আরো বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রী লিপি ছাগলের পরিচর্যা করি। খামারে ছাগলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পরিচর্যার জন্য তিনজন কর্মী রেখেছি। এছাড়া বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় হাইড্রোপনিক উৎকৃষ্টমানের ঘাস আবাদ করেছি। এই ঘাস দিয়েই ছাগলের খাবারের বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ করি।’

মাটি ছাড়া শুধুমাত্র পানি ব্যবহার করে যে ঘাস চাষ করা হয় তাঁকে হাইড্রোপনিক ঘাস বলে। দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে হলে গরু-ছাগলের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচা ঘাসের প্রয়োজন। আমাদের দেশের অনেক খামারির ঘাস চাষের জমি নেই এবং আবার কিছু খামারি আবাদি জমিতে ঘাস চাষ করতে চান না। কিন্তু গরু ছাগলের জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয় কাঁচা ঘাস। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে জমির প্রয়োজন হয় না, তাই ইচ্ছা করলেই সব খামারি খুব সহজেই এই পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে ছাগল ও গরুকে খাওয়াতে পারেন।

তুতুলের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, ‘ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার প্রজননে একাধিক বাচ্চা হয়। রোগ-বালাইও কম হয়। বছরে একবার টিকা দিলেই আর কোনো ওষুধ লাগে না। তাই অল্প খরচে বেশি আয় করা সম্ভব।’

খামারি তুতুল বলেন, ‘একটি বিদেশি গাভীর জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকার খাবার লাগে। অথচ ৩০০ টাকায় প্রতিদিন ২০টি ছাগলকে খাওয়ানো যায়। ছাগলকে খাওয়ানো হয় গম, ভুট্টা, ছোলা বুটের গুড়ো, সয়াবিন ও ঘাস।’

শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, ‘আমরা নিয়মিত তাদের ওই ছাগলের খামার পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এখন অনেকেই ছাগলের খামার গড়ে তুলতে পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসছে। তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ উপজেলায় এক হাজার ৮৩০টি ছাগলের খামারে রয়েছে। এসব খামারে এক লাখ ১০ হাজার ছাগল রয়েছে। ছাগল পালন করে মোটামুটিভাবে সফল হয়েছেন তুতুল দম্পতি। ছাগল পালনে পুষ্টি ও মাংসের চাহিদাও মিটছে। বেকারত্ব কমাতেও সহায়তা করছে এই উদ্যোগ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =

Back to top button