জাতীয়

জলবায়ুজনিত অভিবাসী সমস্যা মোকাবিলায় কর্মকৌশল তৈরির আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট অভিবাসী সমস্যা সমাধানের যুতসই কর্মকৌশল তৈরিতে আলোচনার পথ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায়ের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, কেননা এ স্থানান্তরও একটি কার্যকর অভিযোজন কৌশলের মধ্যে হতে পারে যা আমাদেরকেই সমর্থন করতে হবে। সুতরাং, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে তাদের স্থানান্তর এবং সুরক্ষা বিষয়টি বিশ্বব্যাপী যথাযথ মনোযোগ দেয়া উচিত। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি যুতসই কর্মকৌশল তৈরির বিষয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী স্পেনের রাজধানী ফেরিয়া দে মাদ্রিদে (আইএফইএমএ) ‘অ্যাকশন ফর সারভাইবাল: ভালনারেবল নেশনস কপ২৫ লিডারস’ শীর্ষক সম্মেলনে সোমবার এ আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানব অভিবাসনের ওপর পড়তে পারে এ বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত। চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো ইতিমধ্যে সহিংস দ্বন্দ্বের চেয়েও বেশি মানুষকে স্থানচ্যুত করছে। ধীরস্থিরভাবে সমুদ্র-স্তরের বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো বিষয়গুলো বিশ্বব্যাপী অনেক কম নজর দেয়া হচ্ছে। ‘আমাদের অবশ্যই এই ভারসাম্যহীনতা সংশোধনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ ফোরামের (সিভিএফ) নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমাদের এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারের দাবিদার সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলো তাদের প্রাপ্য সহযোগিতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন সিভিএফ ও ভি২০ ট্রাস্ট ফান্ড এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর নতুন বিশেষ দূত পাওয়া একটি ভালো সফলতা হতে পারে।

সিভিএফ এবং ভি-২০ কে দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিমুখী সহযোগিতার একটি মহৎ উদাহরণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বর্তমান সাফল্যের আরও বিকাশ চাই। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছি, এখন আমরা আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুমকির মুখোমুখি হতে চলেছি।’

জলবায়ু পরিবর্তন এখন প্রতিটি দেশের জন্য বিশেষত বাংলাদেশের মতো জলবায়ু প্রবণ দুর্বল দেশগুলোর জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকিতে পরিণত হয়েছে, বলেন শেখ হাসিনা।

মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঝুঁকি, প্রভাব এবং তা মোকাবিলার সক্ষমতার অভাবের ওপর ভিত্তি করে দুর্বল দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য আমাদের একটি মানদণ্ড তৈরি করতে হবে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন, সমর্থন এবং নিয়মিত বিকাশের ক্ষেত্রে অর্থায়ন কঠোরভাবে আলাদা রাখতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, বেশিরভাগ নির্গমনকারীরা প্রশমনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অনীহা প্রকাশ করছে। যা আন্তর্জাতিক জলবায়ু ব্যবস্থা ধ্বংস করবে এবং বাংলাদেশের মতো জলবায়ু প্রবণ দুর্বল দেশকে বিপদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ‘অতএব, আমাদের অকার্যকারিতার জন্য জবাবদিহিতা চাইতে দ্বিধা করা উচিত নয়।’

আমরা আমাদের অভিযোজন প্রচেষ্টা জোরদার করতে নেদারল্যান্ডসে ২০২০ সালের জলবায়ু অভিযোজন সামিটের দিকে তাকিয়ে আছি। ফোরামের সদস্যরা যদি সম্মত হন তবে বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত রয়েছে, বলেন তিনি।

বিশ্ববাসীর জন্য চূড়ান্ত বাস্তবতা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এটি এখন মানবজীবন ও পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপরিবর্তনীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

১৯৯২ সালের আর্থ সামিটের পর থেকে, গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাসের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি এবং নিঃসরণ এখনও বাড়ছে উল্লে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৃদ্ধির এই প্রবণতা এখন পৃথিবীর জন্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা, দুর্বল দেশগুলো সীমিত মোকাবিলা ক্ষমতা নিয়ে এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হই। আমরা ক্ষয়ক্ষতির জন্য তুচ্ছ বা কোনো অবদান না রেখেও আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এটা গুরুতর অবিচার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই তা স্বীকার করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে, ইউএনএফসিসিসির (জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন–বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন) অগ্রগতি খুব ধীর এবং মূলত অপর্যাপ্ত। জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অভিযোজনমূলক উদ্যোগ বিশেষত আমাদের মতো দুর্বল দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপকে সমর্থন করার জন্য এখনও খুব কমই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত তহবিলের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় মূলধনের অপর্যাপ্ততা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইতিমধ্যে যারা সমর্থন পেয়েছে ও বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে তহবিল ও প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে থাকা প্রায়শই শর্ত ও মানদণ্ড সরাসরি তাদের পক্ষেই যায়।

এসময় জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খবর ইউএনবি নিউজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − thirteen =

Back to top button