ভাইরাল

ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে আমরা খেতাম: জুনাইদের বক্তব্যে স্তব্ধ সবাই

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগে পড়ছেন মো. জুনাইদ। সম্প্রতি একটি বক্তৃার সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন জুনাইদ; যেখানে জীবনের চড়াই-উৎড়াইয়ের নানা গল্প বলেছেন তিনি।

জুনাইদ মূলত ফুটপাতে বড় হয়েছেন। বোধ-বুদ্ধির পর এক বুড়ি মহিলাকে নানী বলে জানতেন তিনি। তার কাছেই তার বেড়ে ওঠা। ৫-৬ বছরে সেই নানী মারা যাওয়ার পর নানাজনের কাছে বড় হয়েছে এই জুনাইদ।

বাবা-মা’র পরিচয় না জানা জুনাইদ বলেছেন, আমি যেখানে থাকতাম, ‘তার পাশেই একটি স্কুল ছিল, আমার সমবয়সীরা যখন স্কুলে যেত, তখন তাদের দিকে থাকতাম। ভাবতাম- ইস! তাদের মত আমিও যদি স্কুলে যেতে পারতাম; যদি তাদের মত আমারও যদি এক জোড়া জুতা থাকত। মনে অজান্তেই কেমন যেন হয়ে যেতাম! কান্না করতাম না কী করতাম- নিজেও বুঝতাম না।’

জুনাইদ জানায়, ‘এমন কোনো কাজ নেই যে আমি করি নাই। কক্সবাজারে টুরিস্টরা যখন বেড়াতে যেত, তখন আমরা ডাস্টবিনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তারা চলে যাওয়ার পর সেই ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে আমরা খেতাম। কাগজ কুড়াতাম, থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে অন্যের মাছ ধরে দিতাম। আর কত কী!’

‘বাবা-মা’ শব্দ যুগল খানা জুনাইদের কাছে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন জিনিস। এই দুটো শব্দ তার মুখ থেকে বের হতে চায় না। এই কষ্ট বুকে নিয়ে সে বলে, আমি বাবা-মাকে কখন হারিয়েছি জানি না, তাদের নামও জানি না, কবে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি তাও জানি না। কখনো আব্বু-আম্মু বলে কাউকে ডাকিনি এবং ডাকতেও পারিনি।

এক গর্ভবতী মহিলাকে রক্ত দেয়ার গল্প শুনিয়ে জুনাইদ বলে, আমার রক্ত হলো ‘ও’ নেগেটিভ। তাই সচরাচর পাওয়া যায় না। একজন গর্ভবতী মহিলাকে রক্ত দেয়ার পর তাদের মুখ থেকে একটি হাসি উপহার পেয়েছিলাম। এতে আমি খুশি। মানুষ কষ্টে আছে এটি আমার কাছে খুব দুঃখের সংবাদ। আমার কাছে ভালবাসা বলতে একমাত্র মানুষের ভালবাসা বুঝি। তাদের মুখের একটি হাসিই আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিতে পারে, খবর বাংলাদশ টুডে।

মানুষকে সাহায্য করা জুনাইদের সহজাত স্বভাব। যে কোনভাবে মানুষকে সাহায্য করতে পারলে সে নিজেকে গর্ব মনে করে। এমনই একটি স্মৃতিচারণ করে জুনাইদ বলে, বৃষ্টির দিনে বিভাগের পরীক্ষা চলছে। সকালে পরীক্ষা দিতে বের হলাম। পথে গিয়ে দেখি একজন ভ্যানচালক বৃষ্টিত ভিজে ভিজে ভ্যান নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তখন আমি ছাতা বন্ধ করে তার ভ্যান ঠেলতে শুরু করি। বিনিময়ে পেলাম একটি মায়া মাখা হাসি। এতে আমার আনন্দ। কেন জানি না মানুষের কাজ করে দিতে আমার এত সুখ!

এসময় ভাবতাম, কেউ যদি আমাকে নিয়ে গিয়ে সারাদিন টয়লেট পরিষ্কার করার বিনিময়ে হলেও একবেলা পড়ার সুযোগ দেয়- তাহলেও খুশি হতাম। এমনকি সেন্টমার্টিনেও গিয়েছিলাম, যেখান বিদেশি অনেক পর্যটক আসে। তাদের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পেতে যিনি আমাকে নিয়ে এসে পড়াশুনা করাবেন। এরপর মাছ ধরতে সাগরে যেতাম। যেখানে অনেকে জিজ্ঞাস করত, তুই বড় হয়ে কি হতে চাস। জবাবে আমি বলতাম, ইঞ্জিনিয়ার হব! তখন হেসে তারা বলত, এখন তোর বয়স ১১ বছর কিন্তু একটি অক্ষরও চিনিস না। কিভাবে তা সম্ভব।

আমি এখনো একটা স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি। সেই স্বপ্নটা হলো— যারা টাকা এবং মায়ার অভাবে পড়াশুনা করতে পারে না ওই বঞ্চিতদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়া। আমি চাই এমন একটি শিশুও থাকবে না, যে নাকি মায়া ও টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না— এই একটা স্বপ্ন আমার, তা যদি এখন পূরণ হয়, তাহলে এখনই আমি মরে গেলে আফসোস থাকবে না।

জুনাইয়েদ’র বক্তব্য শুনে সিয়াম নামে একজন লিখেছেন, ‘হার না মানা এই যোদ্ধাকে হাজার স্যালুট। তোমার জীবন সংগ্রাম সফল হোক ভাই। ভালোবাসা তোমার জন্য। আল্লাহ তোমার জন্য রহমত ও নিয়ামত সারাজীবন বর্ষন করুক।’ রাহি লিখেছেন, ‘শেষ কেঁদেছিলাম সাত বছর আগে। এরপর আজকে, এই মুহূর্তে। এর মাঝে আর কাঁদি নাই। কান্নার সিনেমা খুঁজতাম, দেখে যাতে কান্না আসে৷ মনে হতো কেঁদে চোখ থেকে পানি ঝরাতে পারলে চোখের জন্য ভালো। কিন্তু আমার কিছুতেই কান্না আসতো না। আজকে কেঁদেছি। আমার জীবনটাও অনেকটা জুনাইদের মতন বলে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 7 =

Back to top button