Breakingধর্ম ও জীবন

দাজ্জাল থেকে নিরাপদ থাকতে কী আমল করবেন?

দাজ্জাল এক ভয়াবহ ফিতনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। উম্মতে মুহাম্মাদিকে এ ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকার নিয়মিত আমল কী হবে তা শিখিয়েছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-

>> সুরা আল-কাহফের আমল
হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা আল-কাহফ এর প্রথম ১০ আয়াত আত্মস্থ করবে, তাকে দাজ্জাল থেকে সুরক্ষিত রাখা হবে।’ (মুসলিম)

দাজ্জাল দুনিয়াতে এসে ৪টি বিষয়ের পারদর্শীতা দেখিয়ে মানুষকে ধোঁকায় ফেলবে; প্রতারিত করবে। এ ৪টি বিষয়ই সুরা আল-কাহফে আলোচিত হয়েছে। তাহলো-

১. ঈমানের উপর পরীক্ষা
দাজ্জাল দুনিয়াতে আত্মপ্রকাশ করেই মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনার আহ্বান করবে। মানুষ যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদত করে। তাকে প্রভু বলে মেনে নেয়। ঈমানের উপর এটি অনেক বড় পরীক্ষা। আসহাবে কাহফের সদস্যরা ঈমানের প্রতি কতবেশি জোরদার ছিল তা এ সুরায় ওঠে এসেছে। তারা ঈমান রক্ষার তাগিদে নিজ জনপদ ছেড়ে হিজরত করেছে। তারপরও ঈমান থেকে একটু সরেননি।

২. সম্পদের উপর পরীক্ষা
দাজ্জাল মানুষের সামনে এসেই সম্পদের আধিপত্য দেখাবে। মানুষকে সম্পদের ওপর পরীক্ষায় ফেলবে। সে মানুষকে সম্পদের লোভ দেখাবে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে দুই বাগানের মালিকের ঘটনা তুলে ধরেছেন। যাতে দাজ্জালের সম্পদের লোভে মানুষ ঈমানহারা না হয়।

৩. জ্ঞানের উপর পরীক্ষা
দাজ্জাল মানুষকে জ্ঞানে ধাঁধায় ফেলবে। দাজ্জাল নিজেকে অনেক বড় জ্ঞানী হিসেবে মানুষের সামনে প্রকাশ করবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হজরত খিজির আলাইহিস সালামের জ্ঞানের বিবরণ তুলে ধরেছেন। দাজ্জাল মানুষের সামনে অনেক সংবাদ প্রকাশ করবে। তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে ঈমানহারা না হতেই আল্লাহ তাআলা এ সুরায় জ্ঞানের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

৪. ক্ষমতার উপর পরীক্ষা
পৃথিবীর বিশাল ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে দাজ্জালের হাতে। দাজ্জাল যখন আত্মপ্রকাশ করবে তখন পৃথিবীর এক বিশাল অংশ তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তার ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়বে সবদিকে। আল্লাহ তাআলা বাদশাহ জুলকারনাইনের ক্ষমতার বিবরণ তুলে ধরেছেন। যাতে ঈমানদাররা ক্ষমতার কাছে নিজেদের ঈমান না হারিয়ে বসেন।

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন মুসলমানকে দাজ্জাল থেকে নিরাপদ থাকতে অনুপ্রেরণা স্বরূপ সুরা কাহফ পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন।

>> দোয়া
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন শেষ (রাকাআতের) তাশাহহুদ পড়া শেষ করে, তখন সে যেন ৪টি বিষয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চায়; (বিষয় ৪টি হলো)-
১. কবরের শাস্তি;
২. জাহান্নামের শাস্তি;
৩. জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা এবং
৪. (ভণ্ড) ত্রাণকর্তা দাজ্জালের অনিষ্টতা।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে কুরআন মাজিদের সুরা শেখাতেন ঠিক তেমনিভাবে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য এ দোয়াটিও শেখাতেন। তাহলো-
اَللَّهُمَّ اِنِّي اَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْح الدَّجَّال
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজুবিকা মিন ফিতনাতি মাসিহুদ দাজ্জাল।’ (বুখারি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অভিশপ্ত দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাই।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিন সুরা কাহফের আমল, তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করার মাধ্যমে হাদিসে বর্ণিত ফজিলতগুলো অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =

Back to top button