বাঁচানো গেল না কবরস্থান থেকে বেঁচে ফেরা শিশু মরিয়মকে । ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ঘোষণার পর দাফনের সময় কেঁদে ওঠা শিশু মরিয়ম বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় মারা গেছে। শিশুর বাবা ইয়াসিন মোল্লা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ঢাকা মেডিকেলের এনআইসিইউতে ভর্তি ছিল ওই শিশুটি। তার অবস্থা প্রথম থেকেই আশঙ্কাজনক ছিলো বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নবজাতকের বাবা ইয়াসিন মোল্লা বলেন, আমার সোনামণি মরিয়মকে আর বাঁচানো গেল না বুঝি? আমি তার মাকে কী করে বুঝাবো আমাদের মরিয়ম আর নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর ছয় মাস ১৬ দিনের অন্তঃসত্ত্বা অসুস্থ স্ত্রী শাহিনুর বেগমকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাসচালক ইয়াসিন। তাকে গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
তখন চিকিৎসকরা জানান, তার প্রেশার অনেক হাই। ডেলিভারি না করালে তার প্রেশার কমবে না। চিকিৎসকদের কথায় সম্মতি দেয়ার পর ওইদিন রাতেই তাকে লেবার রুমে নিয়ে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়। ডেলিভারি না হওয়ায় তাকে ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়।
সেখানে চিকিৎসকরা দুদিন চেষ্টার পর তার আবার ব্যথা শুরু হয়। এরপর ১৬ অক্টোবর ভোর পৌনে ৫টার দিকে তার স্ত্রী এক কন্যাসন্তান প্রসব করেন। তখন চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি মৃত অবস্থায় হয়েছে। এরপর হাসপাতালের আয়া মৃত শিশুটিকে প্যাকেটে করে বেডের নিচে রেখে দেন এবং কোথাও নিয়ে দাফন করার জন্য বলেন।
সকাল ৮টার দিকে নবজাতকটির বাবা ইয়াসিন নবজাতককে দাফন করার জন্য আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে এক হাজার ৫০০ টাকা সরকারি ফি দিতে না পারায় তাদের পরামর্শে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে ৫০০ টাকা ফি ও বকশিশ দেয়ার পর মৃত নবজাতকটির জন্য কবর খোঁড়া শুরু হয়।
কবর খোঁড়ার শেষপর্যায়ে শিশুর কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পান। তিনি আশপাশে কোথাও কিছু না পেয়ে পরে পাশে রাখা নবজাতকটির দিকে খেয়াল করেন। এরপর প্যাকেট খুলে দেখেন শিশুটি নড়াচড়া ও কান্নাকাটি করছে। পরে নবজাতককে দ্রুত আবার ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চিকিৎসকরা দেখে নবজাতক বিভাগে ভর্তি করেন।
এদিকে জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণার ঘটনাকে দুঃখজনক মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালক। তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসবে প্রকৃত ঘটনা। ১৬ অক্টোবর শাহেনূর বেগম শিশু মরিয়মকে জন্ম দেওয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু দাফনের সময় কেঁদে উঠলে জানা যায় শিশুটি জীবিত।