দিনমজুরের ছেলে মাহফুজের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার দিনমজুরের ছেলে মাহফুজ ইসলাম। তিনি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে ভর্তির টাকা জোগাতে হতাশায় ভুগছে তার পরিবার।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়নের মৌজা শাখাতী গ্রামের দিনমজুর মোরশেদ আলী। তার একার উপার্জনে চলে সাতজনের সংসার। পাশাপাশি পড়ালেখা করাচ্ছেন পাঁচ ছেলেেমেয়েকে।
সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। নিজস্ব বলতে শুধু ভিটের পাঁচ শতক জমিটুকুই আছে। মাস্টার্স পর্যন্ত পড়িয়ে দুই মেয়ের বিয়ে দেন পাশের একটি গ্রামে।
সবার বড় ছেলে মহিউদ্দিন কালীগঞ্জ করিমুদ্দিন সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি স্থানীয় চামটারহাট রূপালী ব্যাংক শাখার সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। সবার ছোট মেহেরাফ স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মাহফুজ ইসলাম।
তিনি উপজেলার মৌজা শাখাতী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ ও হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান।
এলাকাবাসীরা জানান, দিনমজুর মোরশেদ আলীর পাঁচ ছেলেমেয়ের সবাই মেধাবী। সবার বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দেন। এতদিন ধারদেনা করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। তবে তার আর্থিক অবস্থা ভােলো না।
দিনমজুর মোরশেদ আলী বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর, গরিব লোক। অনেক কষ্টে ছেলেকে লেখাপাড়া শিখাইছি। আল্লাহ মর্জি আমার ছেলে ডাক্তারি চান্স পেয়েছে। কিন্তু আমার সংসারে আয় উন্নতি নেই। কী করে ডাক্তারি পড়াব? কোনো এনজিও বা কোনো সংস্থা যদি সহযোগিতা করে তাহলে ইনশাআল্লাহ আমার ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে পারব।’
মাহফুজ ইসলামের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার পাঁচ ছেলে ও মেয়েকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করাইছি। অনেক সময় না খেয়েও ছিলাম সেটা মরে গেলেও ভুলব না। আমার জীবনে কোনোদিন ছেলে ও মেয়েকে ১০ থেকে ২০ টাকা দিতে পারিনি।
ছেলে পড়াশোনা করে ডাক্তারি চান্স পাইছে সবার মুখে শুনলাম। এখন ছেলেকে ভর্তির জন্য প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাগবে। এতো টাকা এখন কোথায় পাই?’
মাহফুজ ইসলাম বলেন, ‘নিজস্ব চেষ্টায় অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। স্কুল ও কলেজের স্যাররা কোনো প্রকার ফি নিতেন না। টাকার অভাবে বই কিনতে পারিনি, অন্যের বই পড়েছি। রংপুরে গিয়েও টাকার অভাবে কোচিং করতে পারিনি।
মেডিকেলে পাঁচ বছর পড়ার জন্য যে টাকা লাগবে তা আমার পরিবারে পক্ষে বহন করা সম্ভব না। সরকারি ও বেসরকারিভাবে কেউ যদি সাহায্য করতেন, তাহলে একজন সফল ডাক্তার হয়ে গ্রামের অসহায় গরিব মানুষের চিকিৎসা করতাম।’
মৌজা শাখাতী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘মাহফুজ ইসলাম সব ক্লাসেই ভালো ফলাফল করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেন। সে একজন মেধাবী ছাত্র। দরিদ্রতার মাঝে পড়াশোনা চালিয়ে সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তার সাফল্য কামনা করি।’
দইখাওয়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মাহফুজের পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় কলেজ থেকে তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। সে মেডিকেলে ভর্তি সুযোগ পাওয়া আমরা গর্বিত। তার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় মেডিকেলে পড়াশোনা করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।’