Lead Newsকরোনাভাইরাস

নতুন ধরনের করোনাভাইরাস সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা যায়

আবারও নতুন রূপে ছড়াতে শুরু করেছে করোনাভাইরাস। লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলাকেই এজন্য দায়ী করা হয়েছে। এর সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্প্রতি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের ক্রিসমাসে মানুষের ভিড় ঠেকাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার মনে করছে, এই নতুন রূপের করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ সক্ষমতা আগের চেয়েও বেশি। এটি খুব শক্তিশালী রূপ পেয়েছে।

যে ভাইরাসটি ইতিমধ্যে ১৭ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছে। হানা দিয়েছে বিশ্বের পৌনে আট কোটি মানুষের দেহে। যার তাণ্ডব থামাতে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ। যার শুরুটা হয়েছে ব্রিটেন দিয়ে।   

কিন্তু সেই ব্রিটেনে সম্প্রতি করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর থেকে রাজধানী লন্ডনসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে প্রকোপ দেখা দিয়েছে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের। যার তাণ্ডব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশটিতে। এমতাবস্থায় জারি করা হয়েছে লকডাউন। 

এমনকি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন এই করোনাভাইরাস সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেই জানেন না, এটি আসলে কি ধরনের ভাইরাস? এর উপসর্গই বা কী রকম?

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের চরিত্র বদলানো নতুন কিছু নয়। চলমান করোনাভাইরাসেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই প্রজাতিগুলোর মধ্যে আর বেশি ক্ষতিকারক কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং ভয়ংকরভাবে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে। 

মূলত তিনটি কারণে এই ভাইরাসের নতুন রূপটি সবার জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন ভাইরাসটি এর অন্যান্য সংস্করণকে দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে। এটিতে এমন মিউটেশন রয়েছে যা ভাইরাসের অংশকে প্রভাবিত করে। মিউটেশনের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। ব্রিটেনে সেপ্টেম্বরে এটি প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। নভেম্বর মাসে লন্ডনে শনাক্তের প্রায় এক চতুর্থাংশ ছিল নতুন রূপের করোনা। এটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে পৌঁছেছে।

চীনের উহান শহরে প্রথম যে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছিল, তা পৃথিবীর বেশিরভাগ কোণে এখন আপনি খুঁজে পাবেন না। এর রূপ পুরোপুরি বদলে গেছে। এমনকি লন্ডনে ছড়ানো নতুন রূপের ভাইরাসটিও অন্য কোনও দেশ থেকে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্কে মিংক নামের প্রাণীর দেহ থেকেও করোনার নতুন ধরণের মিউটেশন হয়েছে।

তবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে যে ভ্যাকসিন আসছে তা কাজ করবে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করছেন, করোনা রূপ পরিবর্তন করলেও ভ্যাকসিনে কাজ হবে কিন্তু গণহারে সবাই টিকা নেওয়ার পর করোনার স্পাইকে যদি আরও নতুন মিউটেশন হয় তাহলে ভ্যাকসিনে কাজ হবে কিনা সেটা চিন্তার বিষয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এমনিতেই মারাত্মক। ফলে করোনা হলে তাতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। সে জন্যই দ্রুত করোনা ছড়ালে তা আরো মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য। 

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ‘নতুন ধরনের করোনাভাইরাস আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়াচ্ছে। যার জেরে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে সম্প্রতি অতি দ্রুত গতি করোনা বিস্তার লাভ করছে।’ খবর ডয়েচে ভেলের।

ভাইরাসটি যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল যুক্তরাজ্য। লন্ডনে নতুন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসটির কবলে পড়েছেন। 

দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, রোববারই এক হাজার ১০০ জন নতুন এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্রমেই তা আরও বাড়ছে। ভাইরাসটি প্রথম উৎপত্তি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায়। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − eight =

Back to top button